নোটিশে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নতুন ট্রেক (ট্রেডিং রাইটস এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) ইস্যুর জন্য 'বেআইনিভাবে' যে খসড়া বিধিমালা বা রুলস করেছে ডিএসইর বেশির ভাগ সদস্যের মতামত ছাড়াই তাতে অনাপত্তি দিয়েছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ। অথচ এ সিদ্ধান্তটি ডিএসইর সদস্যদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সরাসরি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা তাদের মেয়াদপূর্তির আগে পছন্দের লোককে সুবিধা দিতে তড়িঘড়ি করে বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন ট্রেক ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছেন। আর তাতে সহযোগিতা দিচ্ছে ডিএসইর পর্ষদ। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, নতুন ট্রেক ইস্যুর বিধি প্রণয়ন থেকে শুরু করে প্রাক যোগ্যতা নির্ধারণের কথা স্টক এক্সচেঞ্জের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেই বিধি অনুমোদন করবে। অথচ এখন ঘটছে উল্টোটি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সবকিছু ঠিক করে দিচ্ছে। এতে করে ডিএসইর সদস্যদের ব্যবসার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ডিবিএর সদস্যরা। জানতে চাইলে ডিবিএর সদস্য ও সাংসদ ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যখন করোনার কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা তড়িঘড়ি করে নতুন ট্রেক ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছে। ডিএসইর পর্ষদ আমাদের কোনো মতামত না নিয়েই তাতে অনাপত্তি দিয়েছে। তাই আমরা আমাদের স্বার্থরক্ষায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।ডিএসইর বর্তমান পর্ষদ ও বিএসইসি মিলে তাদের কিছু পছন্দের লোককে খুশি রাখতে নামমাত্র মূল্যে তাঁদের ট্রেক পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
জানতে চাইলে নোটিশদাতা আইনজীবী আহসানুল করিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের বিভিন্ন বিধান তুলে ধরে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে ডিএসইকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে ট্রেক ইস্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ডিএসই সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যরা পরবর্তীতে বিশেষ সাধারণ সভা বা ইজিএম আহ্বান করে পর্ষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার উদ্যোগ নেবে।
জানা যায়, নতুন ট্রেক ইস্যু সংক্রান্ত খসড়া বিধি বা রুলসের ওপর গত ৪ মার্চ ডিএসইর পর্ষদের মতামত চেয়ে চিঠি দেয় বিএসইসি। ওই চিঠি পাওয়ার পর ডিএসই পর্ষদ সভা করে তাদের অনাপত্তি জানায়। এর পর বিএসইসির খসড়া বিধির ওপর সাধারণের মতামত সংগ্রহের জন্য মার্চের শেষ সপ্তাহে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়।
খসড়া বিধিতে নতুন ট্রেক ইস্যুর জন্য আবেদকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান আবেদন করবে সেই প্রতিষ্ঠানের ন্যুনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৩ কোটি টাকা। ডিএসইর বেশির ভাগ সদস্যের আপত্তি মূলত এখানেই। তারা মনে করে এতে করে তাদের ব্রোকারেজ হাউসের বাজারমূল্য বলে কিছু থাকবে না। কারণ সর্বশেষ ডিএসইর একটি সদস্য প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকায়। ২০১০সালে শেয়ারবাজার ধসের আগে এ সদস্য পদের দাম উঠেছিল শত কোটি টাকার উপরে। ধসের পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন করে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা হয়। বর্তমানে ডিএসইর ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিস্ট সদস্য স্বতন্ত্র পরিচালক। শেয়ারধারী পরিচালক রয়েছেন চারজন। আর কৌশলগত পরিচালক একজন। এ ছাড়া পদাধিকার বলে পর্ষদ সদস্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকও। পর্ষদের ১৩ সদস্যকেই আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে যাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু মানুষের হাতে শেয়ারবাজারের লেনদেন সীমাবদ্ধ না থাকে। দেশে বিদেশি নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত করতেই নতুন ট্রেক ইস্যুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে শেষবিচারে শেয়ারবাজারে লাভবান হবে। আর সেটি হলে ডিএসইর সদস্যরাও তার সুফল পাবেন।
তবে ডিএসইর পর্ষদের একাধিক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা ট্রেক ইস্যু ও ডিবিএর নোটিশের বিষয়ে কোনো কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।