বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদরও আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিনিয়োগকারীদের হতাশা কাটাতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠক শেষে বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ সামছুদ্দিন আহমেদ পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনার সূত্র, বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখাসহ সব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার কথা গণমাধ্যমকে জানান।
মঙ্গলবারের বৈঠকে দুই ঘণ্টা আলোচনা শেষে বিএসইসির এই কমিশনার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা, বন্ডে বিনিয়োগ ক্রয়মূল্যে বিবেচনা করা, স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গতিশীল করাসহ পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এ দুই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে সমন্বতি প্রচেষ্টার সুফল পাবেন ভবিষ্যতে।’
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সেদিন বলেছিলেন, ‘বিএসইসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দুই প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করবে। আজকের আলোচনার প্রেক্ষিতে সামনে আরও আলোচনা হবে।’
এছাড়াও বুধবার বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সাক্ষাৎ শেষে তিনি গণমাধ্যমকে জানান- প্রধানমন্ত্রী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
দুই সংস্থার প্রতিনিধিদের এমন বক্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে প্রাণ ফিরে পায় শেয়ারবাজার। পরের দিনই (বুধবার) পতনের রেশ কাটিয়ে দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকে সেদিন ১৪৩ পয়েন্ট যোগ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে একদিনে প্রধান সূচকের এটিই বড় উত্থান ছিল। তবে বিপত্তি বাঁধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া একটি বিজ্ঞপ্তিতে। বুধবার বিকেলে দিকে ছড়িয়ে পড়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়- মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বিজ্ঞপ্তির কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন- শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই বিজ্ঞপ্তির কারণে আজ (বৃহস্পতিবার) লেনদেনের শুরুতেই নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এদিন লেনদেন শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর প্রধান সূচক আগের কর্মদিবসের তুলনায় প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমে যায়। তবে সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি) অভিভাবক অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের খবরে আবারও ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতায় শুরু হয় লেনদেন।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৯ পয়েন্ট বেড়েছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৬ হাজার ৯৩৬ পয়েন্টে।
প্রধান সূচকের সঙ্গে আজ অপর দুই সূচকেরও উত্থান হয়েছে। শরীয়াহ ভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ‘ডিএসই এস’ বৃহস্পতিবার ২১ পয়েন্ট বেড়েছে। আর বাছাই করা কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ‘ডিএসই ৩০’ বেড়েছে ৪৬ পয়েন্ট।
সব সূচকের উত্থানের দিন টাকার অংকে লেনদেনও বেড়েছে ডিএসইতে। আজ প্রধান শেয়ারবাজারে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। গতকাল লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে ৩৭৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ২০৮টিরই শেয়ারদর বেড়েছে। কমেছে ১১৮টির। আর ৪৮ টি কোম্পানির শেয়ারদর আজ অপরিবর্তিত ছিল।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারবাজারে যে পতন হতো, সেই ধারা এখন থেকে আর থাকবে না। তাদের মতে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে বাজারের আরও উত্থান হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ কে এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী অর্থসংবাদকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের বিপক্ষে গিয়েছে। তারঁ মতে- কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারবাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলারের কারণে শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে পতন শুরু হয়। মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে বিএসইসি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ফলপ্রসূ আলোচনার’ কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। অথচ বুধবারের বড় উত্থানের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতেই পতন লক্ষ্য করা গেছে। পরে অবশ্যই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের খবরে বাজারে বড় উত্থান হয়েছে।
মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী আরও বলেন, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন যখন শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ক্যাপিটাল মার্কেট এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য কাজ করছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সবকিছু করার কথা জানিয়েছেন সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ। বিনিয়োগকারী পরিষদের সভাপতি মনে করেন- প্রধানমন্ত্রী এবং বিএসইসির বর্তমান কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন কার্যক্রম।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত না হয়ে নির্ভয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানান মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী।