মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
এছাড়া সবাইকে নিয়মিত মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানও জানান মন্ত্রী। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্যও বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশ কমে গিয়েছিল। হঠাৎ করে নভেম্বরের শেষ দিকে এসে করোনার আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে নাস্তানাবুদ বিশ্ব। ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট তো আছেই। এরই মধ্যে ওমিক্রন ও ডেলটার দাপটকে ‘সুনামি’ আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষ করে ওমিক্রন ও ডেলটার দাপটে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।
উল্লেখ্য, করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন- পুরুষ না নারী? এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন বলেন, ওমিক্রনে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের যেসব জায়গায় ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে, সেসব জায়গার চিত্র ও গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে বলে জানান রোবেদ আমিন।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সময় আমরা বলেছিলাম পুরুষরা অনেক বেশি সংখ্যক আক্রান্ত হচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যে তথ্য এসেছে তাতে ওমিক্রনে পুরুষের চেয়ে নারীর আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। একইসঙ্গে তরুণদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেশি। এক সময় বলা হতো তরুণদের ইমিউনিটি বেশি তারা আক্রান্ত হবেন না। ওমিক্রন এসে সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। শিশুদেরও আমরা আক্রান্ত হতে দেখেছি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপে।
রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের যে টিকাগুলো দেওয়া হচ্ছে সেটা কোনোটাই ওমিক্রন প্রতিরোধে শতভাগ কার্যকর না। যারা আগে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডির মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। বলা হচ্ছে, যারা কোভিড-১৯ এর দুটি ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা যেন বুস্টার ডোজ নেন। কারণ বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে অ্যান্টিবডির মাত্রা অনেক বেড়ে যায় যা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশে সংক্রমণ বাড়ছে উল্লেখ করে মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালের প্রফেসর ফরহাদ মঞ্জুর বলেন, আমাদের এখানে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ধীরে ধীরে। আমাদের করোনা পজিটিভের কেসও বেড়ে যাচ্ছে। গত ৭ দিনে আমাদের মৃত্যুর সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়, স্বাস্থ্যবিধি মানা, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং বাসার বাইরে বের হলে সর্বক্ষণ মাস্ক পরে চলা।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রসঙ্গে মেডিসিনের অধ্যাপক মনজুর রহমান গালিব বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার মতো ক্ষতিকারক নয়। এতে আক্রান্তদের স্বাদ এবং গন্ধের অনুভূতির কোনো বদল হয় না। সর্দিতে নাক ভিজে গেলে ওমিক্রন সংক্রমণেও তেমন ভয় নেই। তবে শুকনো কাশি এবং স্বরভঙ্গ হলে অবশ্যই কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ হলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বিশ্বজুড়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সব ওমিক্রন আক্রান্তেরই গলা খুসখুস করছে। দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ডিসকভারি হেলথের প্রধান নির্বাহী ‘রায়ান নোয়াক’ সম্প্রতি একটি ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ডাক্তাররা করোনা আক্রান্তদের মধ্যে লক্ষণগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। কিন্তু ওমিক্রন আক্রান্তদের লক্ষণ বাকিদের থেকে কিছুটা আলাদা।
গলা খুসখুস ছাড়া কাশি, হালকা জ্বর, ক্লান্তি- এসবই হলো ওমিক্রনের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে সবার শরীরে যে একই রকমের লক্ষণ দেখা দেবে, এমনটা নয়। তবে রায়ান নোয়াক সতর্ক করে বলেন, উপসর্গ গুরুতর নয় বলে ওমিক্রনকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।