এদিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে বিএমবিএ। এ সময় এনবিআরের চেয়ারম্যান ও বিএমবিএর সভাপতি সহ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএমবিএর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১১ সাল থেকে পুঁজিবাজার বিভিন্ন প্রকার প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য আর্থিক সূচক ভাল থাকার পরেও পুঁজিবাজারে তা সঠিকভাবে দৃশ্যমান নয়। আমরা মনে করি, পুঁজিবাজারকে পিছনে রেখে উন্নতির অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। তাই পুঁজিবাজারের গতিশীলতা আনয়নে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন প্রকার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তার ফলাফল লক্ষনীয়।
যেহেতু সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনী কাঠামো সংশোধন,সংযোজ,পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারে এবং তারা সঠিকভাবেই তা করে যাচ্ছেন। কিন্তু পুঁজিবাজার উন্নয়নে ফিসকেল ও রাজস্ব পলিসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে নিম্নলিখিত সুপারিশ সমূহ বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রস্তাবকৃত সুপারিশগুলো হচ্ছে, বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হার ২২.৫ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হার ৩০ শতাংশ তবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, ট্যোবাকো ইত্যাদি খাত ব্যতিত।অর্থাৎ তালিকাভুক্ত কোম্পানীর জন্য কর রেয়াত ৭.৫ শতাংশ যা উদ্যোক্তাদেরকে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করে না। তাই তালিকাভূক্ত কোম্পানীর কর হার কমিয়ে ১৫ৎ শতাংশ এ করার জন্য বলা হয়েছে।
কারণ ৭.৫ শতাংশ কর সুবিধা দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানী ইত্যাদিকে আকৃষ্ট করতে পারে নাই। পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা আসলে প্রথমেই আসে ভাল কোম্পানীর শেয়ারের অভাব। এ বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কেননা দেশে রেজিস্ট্রার্ড লিমিটেড কোম্পানীর সংখ্যা ১,৫০,০০০ এর বেশী, কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানীর সংখ্যা মাত্র ৩৪৮টি যা অত্যন্ত নগণ্য।
অপরদিকে বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংক সমুহ বৃহৎ করের আওতাধীন রয়েছে এবং তার কর হার ৩৭.৫ শতাংশ, যা হতাশাজনক। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মরত আছে। পুঁজিবাজারের ধীর গতি, কোভিড-১৯ , ব্যবসার সীমাবদ্ধতা থাকায় বেশির ভাগ মার্চেন্ট ব্যাংক অপারেটিং খরচ চালানোই সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের বৃহৎ করের আওতায় রাখা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো কর হার নির্ধারন অযৌক্তিক এবং টিকে থাকা হুমকির সম্মুখীন।
অতএব, মার্চেন্ট ব্যাংক সমুহকে বৃহৎ করে যুক্ত করে ভূল ব্যবস্থাপনায় ফেলা হয়েছে। এজন্য মার্চেন্ট ব্যাংক সমুহকে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা পূর্বক কর হার ২৫ শতাংশ করা হোক এবং তা সাধারন সার্কেলে এসেসমেন্ট করার বিষয়ে বলা হয়েছে।
এদিকে কর্পোরেট কর কর্তনের পর লভ্যাংশ প্রদান করা হয়। লভ্যাংশ প্রদানের সময় ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর কর্তন করা হয়। পরবর্তীতে আবার লভ্যাংশ গ্রহীতার ব্যক্তিগত আয়কর রির্টানের সময় তার উপর প্রযোজ্য হারে কর প্রদান করতে হয়। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ গ্রহন না করে রেকর্ড ডেইটের আগেই বিক্রয় করে দেয় যা বাজারকে অস্থির করে। যা দ্বৈত কর নীতির আওতায় পড়ে। এক্ষেত্রে অগ্রিম করটিকে চুড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচনা করার বিষয়ে বলা হয়েছে।
এছাড়া তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানীর ভ্যাট হার এক। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানীর ভ্যাট হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এতে করে সরকারের মোট ভ্যাট হ্রাস পাবে না। বর্তমানে বহুপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা আছে তালিকাভুক্ত না হয়ে বিভিন্নরূপ সুবিধা ভোগ করছে। এজন্য পুঁজিবাজারের গতিশীলতা ও রাজস্ব বেশী পরিমানে আদায়ের লক্ষ্যে তালিকাভূক্ত কোম্পানীর ভ্যাট হার হ্রাস করার জন্য বলা হয়েছে।