অনেক দেশের স্যাটেলাইট এখানে ঘুরাঘুরি করছে, আমি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট খুঁজতে শুরু করলাম। কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে ফ্রান্সের স্যাটেলাইটকে জিজ্ঞেস করলাম। আচ্ছা বল তো ভাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি কোথায়? সে একটু রেগে বললো, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোথায় সেটা আমি কিভাবে বলবো? আমি বললাম, তোমরা না এটা তৈরি করেছো? উত্তরে বললো, সে কবেকার কথা, তাছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের খুব একটা ব্যবহার নেই। কারণ কী বলতে পারো? প্রশ্ন করলাম। উত্তরে বললো, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি।
আমি ফ্রান্স স্যাটেলাইট ভাইয়ের উত্তরে খুশি হলাম না। ভাবলাম নিজের মতো করে দেখি কী অবস্থা! সর্বনাশ! মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার, পাউন্ড, ইউরো খরচ করে সবাই নতুনত্বের খোঁজে অথচ যা রয়েছে তার কোনো খোঁজখবর নেই? এ দেখি অনেকটা আমার মতো অবস্থা। বিশ্ব ঘুরে দেখলাম না অথচ মহাশূন্যে এসে হাজির! এসেই যখন পড়েছি তো একটু জেনে যাই ঘটনাগুলো। ঘুরে ঘুরে দেখছি আর ভাবছি! এমন সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে দেখা। আমি বেশ আপ্লুত হয়ে কাছে গিয়ে বললাম, ভাই স্যাটেলাইট তুমি কেমন আছো? কেমন চলছে তোমার দিনকাল এই মহাশূন্যে? উত্তরে বললো, কেটে যাচ্ছে তবে রক্ত বের হচ্ছে না।
আমি বললাম, তোমার কথাটি ঠিক বুঝতে পারলাম না! ও বললো, না যে কাজে আমাকে তৈরি করা হয়েছিল সেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ও বুঝেছি, এ আর নতুন কী? পৃথিবীতেও তো বাংলাদেশের একই অবস্থা। স্যাটেলাইট ভাই বললো, মানে? আমি বিশ্লেষণ করলাম যেমন, দেশের হাসপাতালগুলো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কিনে কিনে গুদামজাত করে রেখেছে, সেগুলোর ব্যবহার না হবার কারনে জং ধরে, মরিচা পড়ে অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
তারপর তুমি যেমন মহাশূন্যে ঘুরাঘুরি করছো কাজ কাম ফেলে, পরে যখন নষ্ট হবে দেখবা মেরামতের অভাবে এখানেই পরে থাকতে হবে। আমি বললাম, যাক ভাই এখন আমাকে যেতে হবে, দেখি অন্যদের কী অবস্থা! আমেরিকা এবং রাশিয়ানদের ঘাটিতে ঢুকতেই হাজারও প্রশ্ন, কী চাই, কী না চাই ইত্যাদি। আমি বললাম মহাশূন্যেও বাটপারি? পেয়েছো কী? শান্তিতে একটু ঘুরবো ভেবে পৃথিবী ছেড়েছি অথচ এখানেও তোমরা? মরে যে শান্তি পাব তাও তো নিশ্চিত না দেখছি? তা তোমরা কী ওপারও দখল করে নিয়েছো? আমার কড়া মেজাজ এবং প্রশ্নের ভাব ভঙ্গিতে একটু নরম হয়ে বললো, ভাই তুমি পৃথিবীর কোন দেশ থেকে এসেছো? বললাম কেন দেখে কী মনে হয়?
উত্তরে বললো দেখে যা মনে হয়েছিল সেই ভাবেই তোমাকে হটাতে চেষ্টা করে ছিলাম, কিন্তু কথাবার্তা শুনার পর বুঝতে পারছি না, তুমি কোত্থেকে এসেছো? বুঝলাম ওরা কিছুটা ভয় পেয়েছে, তো এই সুযোগে জিজ্ঞেসা করলাম, এই যে কোটি কোটি ডলার খরচ করে কোন গ্রহে কী আছে বা কী নেই তার সন্ধান করছো, অন্যদিকে দুনিয়ায় যা আছে তা ধ্বংস করছো, এমনকি মানুষগুলোকে, কোটি কোটি ডলার দিয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র দিয়ে পৃথিবী শেষ করছো, কারণ কী? পৃথিবীটা কি তোমার বাপ-দাদার যে যা খুশি তাই করবা? শোন, এই যে, যা কিছু দেখছো যেমন চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, এর সব কিছুর মালিক হচ্ছেন স্রষ্টা, শত চেষ্টা করলেও তোমরা এগুলো ধ্বংস করতে পারবে না, বলে দিও তোমার দেশের মানুষদের। কথা শেষ করে চলে গেলাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাকে দেখে বেশি খুশি বলে মনে হলো। আমি বহু কিছু জিজ্ঞেস করলাম। বললাম, ক্যাশ টাকা তুলে কার্ডের ব্যবহার কেন করছো না? ডিজিটাল ভোট সিস্টেমে চুরি কেন হচ্ছে? ডিজিটাল ক্রাইমে ফেলে যখন যাকে খুশি তাকে জেলে ঢুকাচ্ছো, দেশের গোপন তথ্য ফাঁস করছো কারণ কী? অথচ ঢাকার যে করুণ অবস্থা সেদিকে কী খেয়াল আছে? স্যাটেলাইট ভাই বিষয়টি বুজতে পারলো না।
আমি বললাম তোমাকে হাজার হাজার কোটি ডলার দিয়ে কিনে আনা হয়েছে দেশের পরিকাঠামোকে মজবুত করার জন্য। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে পুরো দেশকে সুন্দর করে গড়া, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া এসব কাজে, অথচ তুমি দিব্যি মহাশূন্যে ঘুরছো? দেশের পরিকাঠামোকে মজবুত করতে হবে, সেই কাজে মনোযোগী হতে হবে। জানো কত হাজার কোটি ডলার বিশ্ব ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে, দেশের গরিব মানুষকে জিম্মি রেখে, তোমাকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়েছে? দেশকে সোনার বাংলা করার জন্য? আর তুমি আমাকে বললে কেটে যাচ্ছে রক্ত বেরোচ্ছে না। বলি, একটু রক্ত বের করতে চেষ্টা কর, আর কতদিন এভাবে চলবে? ওদিকে দেখছো না? ওই দেখো রাশিয়া, আমেরিকা, চীন সহ বাকিরা পৃথিবীর বারোটা বাজাতে উঠেপড়ে লেগেছে। শুধু নিজেদের কথা ভাবছে। অন্যদিকে তোমাকে যারা এখানে পাঠিয়েছে তারা দেশের ক্যাশ টাকা বিদেশে পাচার করার তালে আছে।
আর তুমি আমার মতো মহাশূন্য ভ্রমণে? আমি তো না হয় আমার নিজের খরচে ঘুরছি তুমি কার টাকায় এখানে ভেবেছো? মেজাজ আমার এত খারাপ হয়েছে যে বেশ চিৎকার করে কথা বলছি। পাশে আমার স্ত্রী ঘুমোচ্ছিল, চিৎকারে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে। সে সুইডিশ ভাষায় ঘুমের ঘোরে বলতে লাগলো, মাঝ রাতে মোর ঘুমের ঘরে কে যে ক্ষণে ক্ষণে জোরে কথা বলে, মোর ঘুম ভেঙ্গে যায় বারে বারে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com