এ পটভূমিতে গতকাল বুধবার ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি রাশিয়াকে চাপে রাখতে ‘আরও বেশি’ পদক্ষেপ নিতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানান। রুশ বাহিনীর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর দেশ ‘অন্ধকারতম সময়’ পার করছে মন্তব্য করে জেলেনস্কি ক্রেমলিন–সংশ্লিষ্ট সবার ওপর নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। পাশাপাশি ইউক্রেনে ‘নো ফ্লাই জোন’ (উড্ডয়ন–নিষিদ্ধ এলাকা) কার্যকরের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বলেন, ইউক্রেন প্রশ্নে তাঁর দেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে। পশ্চিমাদের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য বিশ্বে প্রভাব বিস্তার এবং রাশিয়াকে একঘরে করা।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট এ–ও বলেন, ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে রাশিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান ‘পরিকল্পনামাফিক’ চলছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল ছিল ইউক্রেনে রুশ হামলার ২১তম দিন। রাজধানী কিয়েভে কারফিউ চলার মধ্যেই শহরটির বিভিন্ন আবাসিক ভবনে গোলা ছুড়েছে রুশ বাহিনী। কিয়েভের খুব কাছে পৌঁছে গেছে রুশ বাহিনী। শহরটির চারপাশে তারা প্রতিরোধের মুখে পড়েছে বলে ইউক্রেন দাবি করেছে। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর খারকিভ ও উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ শহরেও গতকাল হামলা হয়েছে। বোমা হামলা হয়েছে মারিউপোল শহরের একটি থিয়েটারে, যেখানে অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় আলোচনা হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে অনলাইনে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। এরপর ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘বৈঠক চলবে। আমাকে জানানো হয়েছে আলোচনা আগের চেয়ে বেশি বাস্তবসম্মত পথে এগোচ্ছে। তবে আলোচনায় ইউক্রেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে।’ এ সময় তিনি পরিষ্কার ইঙ্গিত দেন, শিগগিরই তাঁর দেশের ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। এর আগেও জেলেনস্কি এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
রাশিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো গতকাল জানায়, যুদ্ধ বন্ধে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার ব্যাপারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ‘কিছু আশা’ দেখছেন। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে লাভরভ বলেন, উভয় পক্ষ ইতিমধ্যেই ‘সমঝোতার কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছে বলেই তাঁর বিশ্বাস। নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণের বিনিময়ে মস্কোর তরফে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ‘গুরুত্বসহকারে আলোচনা’ হয়েছে।
যদিও মস্কোর দাবি অনুযায়ী সুইডেন বা অস্ট্রিয়ার মতো নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার প্রশ্নে ‘আপত্তি’র কথা জানিয়েছে ইউক্রেন। গতকালও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বসার কথা ছিল।
অভিযান শুরুর আগে থেকে রাশিয়া বলে আসছে, তারা কোনোভাবেই চায় না ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দিক। পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণকে হুমকি হিসেবে দেখে থাকে ক্রেমলিন। প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলার ‘যেসব কারণ’–এর কথা রাশিয়া বলছে, তার মধ্যে অন্যতম কিয়েভের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা।
এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলারুশের গোমেলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা প্রথমবার আলোচনায় বসেন। এরপর ৩ মার্চ বেলারুশের বেলোভেজসকায়া পুশচায় দ্বিতীয় দফার বৈঠক হয়। ওই বৈঠক থেকে বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘মানবিক করিডর’ চালুর চুক্তি করে দুই পক্ষ। পরে ৭ মার্চ বেলারুশের ব্রেসট অঞ্চলে তৃতীয় দফা বৈঠক হয়। ১০ মার্চ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা তুরস্কের আনাতোলিয়ায় আলোচনায় বসেছিলেন।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, যে সময় পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল, তার আগেই যুদ্ধ শেষ হতে পারে। তাঁরা মনে করেন, মে মাস পর্যন্ত যুদ্ধ গড়াতে পারে। কারণ, ওই সময়ের মধ্যে রাশিয়ার রসদ কমে যাবে। যুদ্ধে নতুন সেনা যুক্ত করতে পারবে না দেশটি।
এদিকে পোল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার ইউক্রেনে ‘সশস্ত্র শান্তিরক্ষী’ পাঠাতে ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।