১৯৭০ ও ১৯৮০ দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে স্ট্যাগফ্লেশন দেখা দিয়েছিল। জ্বালানি তেলের দাম ও বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং সহজ মুদ্রানীতি ১৯৮০ সালে ভোক্তা মূল্য সূচককে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশে ঠেলে দিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা সুদের হার প্রায় ২০ শতাংশ বাড়িয়ে তুলেছিলেন। সে সময় গভীর মন্দার মুখোমুখি হয়েছিল দেশটির অর্থনীতি।
মার্কিন অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে স্ট্যাগফ্লেশনের সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ফলস্বরূপ জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে একটি অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় বলেও মনে করেন এ বিশ্লেষকরা। ১৯৭৩ সালে ইসরায়েলকে সমর্থনের কারণে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ফলে সে সময় দেশটিতে জ্বালানির দাম রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয়।
ব্যারেলপ্রতি দাম দ্বিগুণ এবং পরবর্তী সময়ে চারগুণ বেড়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতি ভোক্তাদের ওপর আকাশচুম্বী ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল। বিদেশী জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল একটি অর্থনীতির জন্য এটি ছিল বড় একটি ধাক্কা। ১৯৭৪ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যদিও সে স্বস্তি অস্থায়ী ছিল। পরবর্তী সময়ে ইরানের বিপ্লব ১৯৭৮-৭৯ সালে জ্বালানির দাম নাটকীয়ভাবে পর্বতসম উচ্চতায় নিয়ে যায়।
কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এখন স্ট্যাগফ্লেশনের লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। মার্কিন নাগরিকরা এরই মধ্যে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে। এ পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার বাড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক নীতি কঠোর করতে প্ররোচিত করছে। সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামারস ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা এবং মূল্যবৃদ্ধি থামাতে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অভিযোগ করেছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্ট্যাগফ্লেশনের পথ প্রশস্ত করেছে বলেও মনে করেন তিনি।
ল্যারি সামারস বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে ফেড গত এক বছরে তার ত্রুটিগুলোকে বিবেচনায় নেয়নি এবং বিপজ্জনক কাঠামোর সঙ্গে কাজ করেছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করতে আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
তিনি আরো বলেন, ফেডের বর্তমান নীতির গতিপথ স্ট্যাগফ্লেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আগামী কয়েক বছর গড় বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি উভয়ই ৫ শতাংশের ওপরে থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত একটি বড় মন্দা তৈরি করতে পারে।
স্ট্যাগফ্লেশন আসন্ন বলে মনে করছেন কুইল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ডালাস ফেড প্রেসিডেন্টের সাবেক উপদেষ্টা ড্যানিয়েল ডিমার্টিনো বুথ। তিনি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ক্রমহ্রাসমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের পাশাপাশি জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যস্ফীতির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এ মূল্যস্ফীতির হার সত্তরের দশকের তুলনায় দ্বিগুণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ধীর অর্থনীতিতে আর্থিক নীতি সহজ করার পরিবর্তে ফেড কঠোর করার প্রচারণা শুরু করেছে। এটি আমাদের ১৯৮০ সালের মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে। সূত্র: ফক্সবিজনেস।