সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাসে ব্রাজিলের বিমান ধরবে ফুটবলাররা। বিকেএসপির চূড়ান্ত বাছাই শেষে রনি ফিরে গেছে নিজ জেলা হবিগঞ্জে। বর্তমানে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার মাধ্যমে নিজের পাসপোর্ট তৈরির কাজে ব্যস্ত রনি। তবে পুরো ব্যাপারটাই রনির কাছে স্বপ্নের মতো।
পিছনের কাহিনিটা শুনলেই বুঝতে পারবেন কারণটা। রনিদের পরিবারের অবস্থা বলা যায় নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতো। বৃদ্ধ বাবা তৈয়ব আলী পাহাড় থেকে কাঠ কেটে সেগুলো বাজারে বিক্রি করতেন। আর তাতেই কোনোরকম সংসার চলত। দুমুঠো ভাত না জুটলেও সারাদিন ফুটবল মাঠেই মন পড়ে থাকত রনির। আর এভাবে খেলতে খেলতেই সুযোগ মেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্কুল ফুটবলে। সেখানে আলাদা করে সবার নজরে আসেন রনি। এরপর সিলেট বিকেএসপিতে ট্রায়ালের পর সুযোগ আসে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার।
কিন্তু সেখানেও সমস্যায় পড়েন রনি। বিকেএসপির নির্ধারিত মাসিক বেতন দিতে না পারায় পালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে রনি। ব্রাজিলে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার আনন্দেরর মাঝে সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে রনির, “আমাদের আর্থিক অবস্থা ছিলো খুব খারাপ। বাবার কাছে বিকেএসপির বেতনের টাকা চাইলে দিতে পারতেন না। তাই বাধ্য হয়ে বিকেএসপি ছেড়ে চলে আসি।’
বিকেএসপি ছাড়ার পর সংসারের হাল ধরতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে শ্রমিকের কাজে নেমে পড়ে রনি। এলাকার নদী থেকে বালু তোলার কাজ করে সংসারে সেই টাকা দিয়ে দিত, “ওই সময় কী করব নিজেও ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাবার কষ্ট দেখে আমার খুব খারাপ লাগত। একপর্যায়ে তাই বাধ্য হয়ে বালু তোলার মেশিনের শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করি।”
কিন্তু এই কাজের ফাঁকেও এলাকায় বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নিত রনি। তেমনই এক টুর্নামেন্টে রনির ফুটবল জাদুতে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি করে নেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক (সুমন)। কিন্তু ওই একাডেমিতে যেতেও বাধা ছিলো রনির।
কারণটা ওই আর্থিক দুরবস্থা, “বড় ভাইকে বিদেশ পাঠাতে বাবা জমি বন্ধক রেখেছিলেন। সেই টাকা পরিশোধ করতে ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ নেন। আমি বালু তুলতাম। ফুটবল খেললে বাড়তি কিছু পাব না, সেটা সুমন ভাইকে তখন জানিয়ে দিই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাকে এক লাখ টাকার চেক দেন এবং একাডেমিতে ভর্তি করে নেন।”
বড় অঙ্কের টাকা পেয়ে বন্ধকি জমি ছাড়িয়ে নেয় রনি। এরপর তিন বছর ধরেই খেলেছেন ব্যারিস্টার সুমনের একাডেমিতে। গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় সিলেট বিভাগ। সেই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন এই রনি।
খেলেন রাইটব্যাক পজিশনে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের বিভাগীয় দলে সুযোগ পেতে রনিকে পার হতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। শুরুতে ইউনিয়ন পর্যায়ের দলে খেলেন রনি। সেখানে তার দল হারলেও বাছাই করা খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠন করা থানা পর্যায়ে ঠীকই জায়গা হয় রনির। একইভাবে থানার সেরা খেলোয়াড়দের সুযোগ মেলে জেলা পর্যায়ের দলে।
সর্বশেষে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার সেরা ফুটবলার নিয়ে গঠন করা হয় বিভাগীয় দল। এরপর দেশের ৮ বিভাগ থেকে সেরা ৪০ ফুটবলারের মধ্য থেকে বাছাই করে নেওয়া হয়েছে ব্রাজিল সফরের জন্য ১১ জনকে। সেই বাছাইয়ে জায়গা করে নেন রনি।