মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধান। দিল্লির এই উত্তর-পূর্ব প্রান্তেই একসময় ধর্মের নামে ধ্বজা উড়িয়ে চলেছিল রক্তের খেলা। ঠিক দুই মাস পর করোনার সংক্রমণ সেই দুই ধর্মাবলম্বীদের সংক্রমণের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে শেখাল। তিন সন্তানের জননী ইমরানা সাইফি। নিয়ম মেনে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত রমজান মাসের রীতি পালন করছেন তিনি। পাশাপাশি সাফাইকর্মী হিসেবে জীবাণুনাশক-স্প্রে নিয়ে ঘুরছেন উত্তর দিল্লির এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বোরখা পরে করছেন এলাকার জীবাণুনাশের কাজ। ধর্ম-বর্ণের পার্থক্য ভুলে তাঁকে এই কাজে সাহায্য করছেন স্থানীয় মন্দির ও গুরদ্বার কমিটির প্রতিনিধিরা। জানা যায়, সপ্তম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি ইমরানা। তবে মানবতার পাঠ তিনি পড়েছেন। তাই এই সঙ্কটের মুহূর্তে মানুষের পাশে থাকতে উদ্যোগ নিয়ে করোনা যোদ্ধাদের একটা দল তৈরি করেছেন। সেই দলে ইমরানা-সহ মোট ৩ জন সদস্য। তাঁরাই এখন ঘুরে ঘুরে এলাকা সাফাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, “বরাবরই মানবতার পক্ষে লড়াই করেন ইমরানা। মাস তিনেক আগে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যখন উত্তাল দিল্লি, তখনও ধর্মের ভেদাভেদ না রেখে আর্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ইমরানা সইফি।” এখনও সেভাবেই স্প্রে নিয়ে মন্দির-মসজিদ-গুরদ্বারাতে ঢুকে সাফাইয়ের কাজ করছেন ইমরানা।
ইমরানার কথায়, “এই সঙ্কটকালে আমরা মন্দির-মসজিদ-গুরুদ্বারের ভেদাভেদ করছিনা। যেখানেই দেখছি জীবাণু-নাশ করার প্রয়োজন, ঢুকে পরে স্প্রে করে দিচ্ছি। এখনও পর্যন্ত কোনও মহল থেকে বাধা আসেনি। আমি ভারতের সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই। আমি দেখাতে চাই আমরা সবাই এক, একসঙ্গেই বাঁচতে চাই।” যদিও ইমরানার এই উদ্যোগে এখও পর্যন্ত বাধা দেননি কেউই। নেহেরু বিহার দুর্গা মন্দিরের পুরোহিত পণ্ডিত যোগেশ কৃষ্ণা জানান, “এই ধরনের পদক্ষেপ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উর্দ্ধে। এভাবেই আমাদের একে অপরকে সাহায্য করা উচিত। ঘৃণা বর্জন করে ভালোবাসার আশ্রয় নেওয়া উচিত।” জানা যায়, ইমরানার স্বামী নিয়ামত আলি একজন প্লাম্বার। তাই সংসারে আর্থিক সাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে সাফাই কর্মীর কাজ করেন ইমরানা।