ডিএসইর দেওয়া তথ্য মতে, গত সপ্তাহের টানা পতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ৩০৭ পয়েন্ট হারিয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৫৬৫ পয়েন্টে। সেদিন লেনদেন শেষে ‘ডিএসই এক্স’ ১৩৪ পয়েন্ট হারায়। আর মঙ্গলবার ২৭ পয়েন্ট , বুধবার ৯৩ এবং বৃহস্পতিবার ৫১ পয়েন্ট হারায় ডিএসইর প্রধান সূচক।
সূচকের ধারাবাহিক পতন নিয়ে বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা হয় অর্থসংবাদের। তারা বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে মন্দাভাব, গুজব এবং ডে ট্রেডিংয়ে পতন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর পতনের ধারা থেকে বের হয়ে আসতে বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ডিলার, আইসিবি, বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ গত বুধবার অর্থসংবাদকে বলেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ সারা পৃথিবীতে ইক্যুইটি মার্কেট, স্টক মার্কেট বসে গেছে। বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য তো আরও ভিন্ন। আমাদের দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশই ট্রেডার (নিয়মিত শেয়ার বিক্রেতা), ইনভেস্টর (বিনিয়োগকারী) কম।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনেন। যার কারণে তাদের দুই/আড়াই বছর বা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের কথা বললেও তাঁরা তা শুনতে চায় না। উত্থান-পতন শেয়ারবাজারের ধর্ম। দুই-একদিনের মধ্যে পতনের ধারা কেটে যাবে হয়তো।
শেয়ারবাজারের এই বিশ্লেষক আরও বলেন, কেউ তো বাজারকে টাকা দিচ্ছে না। আইসিবি নিজেই দেউলিয়া, তারা কিভাবে বাজারকে সাপোর্ট দিবে? আর মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ম্যানেজমেন্টের কাছে টাকা থাকলেও তারা কিভাবে কি করছে তা জানা মুশকিল। প্রত্যেকেই তো বাজার থেকে সুবিধা নিতে চায়, কেউ সাপোর্ট দিয়ে বাজারকে টেনে তুলবে এটা আশা করা যায় না।
শেয়ারবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এবং শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর মতে- শেয়ারবাজারের উন্নতির জন্য বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইসিবিকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মার্কেট নিয়ে যেসব গুজব ছড়ানো হয়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, মার্কেট নিয়ে বেশ কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে। এসব গুজব বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক নিকট অতীতে যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলো বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে। যেমন-ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্রোকারেজ হাউজ, লিজিং কোম্পানি, আইসিবির কাজ হচ্ছে মার্কেট যখনই খারাপ হবে তখনই এসব প্রতিষ্ঠান বাজারকে সাপোর্ট দেবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল সম্প্রতি, যা মার্কেট এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থবিরোধী। এজন্য বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইসিবিকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এদিকে পতন ঠেকাতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরু হওয়ার আগে ১৫ মিনিটের প্রি-ওপেনিং সেশন বাতিল করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে ১৫ মিনিটের পোস্ট-ক্লোজিং সেশন চলবে। রোববার (২২ মে) থেকে নতুন এই নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
প্রি-ওপেনিং সেশন সুবিধা ব্যবহার করে বেশ কিছু ব্রোকারেজ হাউজ অবাস্তব ক্রয়-বিক্রয় আদেশ দিচ্ছে। সার্কিট ব্রেকারে সর্বোচ্চ দামে বা সর্বনিম্ন দামে বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় আদেশে বাজারে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর বিএসইসি বেশকিছু ব্রোকারেজ হাউজকে সতর্কও করে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রি-ওপেনিং সেশন বাতিল করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।