রাশিয়ার দাবি, গত ১৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ৪ দিনে আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা থেকে দুই হাজার ৪৩৯ জন ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আত্মসমর্পণ করেছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কারখানার বেসমেন্ট এলাকা, যেখানে এতদিন ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা আত্মগোপন করেছিলেন—বর্তমানে রুশ বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
শুক্রবার ইউক্রেনের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনা বাহিনীর সদর দপ্তর (আজভস্তালের) সেনাসদস্যদের ওই এলাকা থেকে বের হওয়া এবং নিজেদের জীবন রক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছেন।’
আজভ সাগরের তীরবর্তী মারিউপোল শহরটি কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল রুশ বাহিনীর কাছে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই এই শহরটি নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টায় ছিল রাশিয়া।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর ২ মার্চ মারিউপোলে প্রবেশ করে রুশ সেনারা। প্রান্তিক বিভিন্ন এলাকা দখলের পর ৪ মার্চ শহরটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের দিকে এগোতে শুরু করে রুশ বাহিনী।
এদিকে, শহরের চতুর্দিক রুশ বাহিনী ঘিরে ফেলায় বিপদে পড়েন মারিউপোলের সাধারণ বেসামরিক মানুষজন। শহর থেকে বের হওয়ার প্রায় সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন সময় মানবিক করিডরের মাধ্যমে অবশ্য তাদের বেশিরভাগকেই মারিউপোল থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু তার পরও সেখানে আটকা পড়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ।
রুশ গোলার অব্যাহত আঘাত থেকে বাঁচতে অবশেষে তারা মারিউপোল শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে আজভস্তাল ইস্পাত কারখানার ভূগর্ভস্থ ঘরগুলোতে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু ও নারী ছিলেন। শহরের প্রায় সব এলাকায় রুশ সেনাদের হাতে পরাজিত হয়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের একাংশও আশ্রয় নেন ওই কারখানায়।
সাবেক সোভিয়েত আমলে প্রায় ৫ মাইল এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাটি হয়ে ওঠে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি। গত ১৭ মার্চ ইস্পাত কারখানা ব্যতীত গোটা মারিউপোল দখলে বোমাবর্ষণ শুরু করে রুশ বাহিনী। শহর দখলের পর ২২ এপ্রিল আজভস্তাল কারখানা অঞ্চল ঘেরাও করে ফেলে রুশ সেনারা এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়।
কিন্তু ইউক্রেন বাহিনী তাতে সাড়া না দেওয়ায় এক পর্যায়ে বোমা মেরে ওই কারখানা উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল রুশ সেনারা। তবে কারখানাটিকে কয়েক হাজার বেসামরিক থাকায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে সেনাদের নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।