মঙ্গলবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ’উন্নয়ন সমন্বয়’ আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্যখাতে আমরা দীর্ঘদিন নজর দিতে পারিনি বা অবহেলিত থেকেছে। আমি বলব, এবারের বাজেট যেটা হবে, সেটা হবে স্বাস্থ্য বাজেট। পুরো চিত্রই হবে স্বাস্থ্য ঘিরে, অর্থনীতিও হবে স্বাস্থ্যকে ঘিরে। স্বাস্থ্য খাতকে খোলনলচে বদলে ফেলার বাজেট আসবে আগামীতে।”
আগামী তিন বছর স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক আতিউর বলেন, “গত বছরগুলোতে আমরা স্বাস্থ্যখাতে যা খরচ করি, তা জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ এবং বাজেটের ৫ শতাংশ। এটা এই বছরই জিডিপির ২-৩ শতাংশ হয়ে যাওয়া উচিত। তারপর আমাদের টার্গেট থাকবে আগামী তিন বছরের জন্য জিডিপির ৪ শতাংশ আমরা স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করব। এবার হয়ত বাজেটের ২০ শতাংশে নিতে পারবেন না। কিন্তু ১০ শতাংশের কম কোনো অবস্থাতেই যাতে না হয়।”
সবার জন্য খাদ্য প্রশ্নে আপস করার সুযোগ নেই মন্তব্য করে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আতিউর বলেন, “দুর্ভিক্ষ না হোক, বুভুক্ষা যাতে আমাদের পেয়ে না বসে সেদিকে নজর দিতে হবে।”
“আমাদের ১০ শতাংশ গরিব মানুষ আছে। তার সঙ্গে যদি ৮-১০ শতাংশ নতুন গরিব যদি যুক্ত হয়, তাদের বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।”
পঞ্চগড় ও ঈশ্বরদীতে মতো স্থানীয় বাজার থেকে সবজি কিনে তা ত্রাণের সঙ্গে বিতরণের প্রসঙ্গ টেনে আতিউর বলেন, “খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী পদ্ধতি আমরা নিতে পারি। স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিনে তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করা যেতে পারে।”
সংশোধিত বাজেটের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজেটের পুনর্বিবেচনা ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষির জন্য যেখানে যেখানে দরকার, সেখানে বাজেটটাকে নিয়ে আসা।
বিদেশ সফরের বাজেট এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত থাকা বাজেট এক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে বলে মনে করেন সাবেক এই গভর্নর।
“অনেক প্রকল্প আছে, সেগুলো এক বছর পরে শুরু করলেও হয়ত খুব বড় ক্ষতি হবে না। সেগুলো আমরা ভাবতে পারি।”
তবে অর্থনীতি চাঙ্গা করার স্বার্থে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ বাড়ানার সুপারিশও করেন তিনি।
“যাতে খুব অল্প সময়ে সাত-আটটা চালু করা যায়। যাতে চীন-জাপান থেকে যেসব কোম্পানি উঠে আসতে চায় তাদেরকে এখানে আকৃষ্ট করা যায়।”
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা জোরদারের সুপারিশ করে আতিউর বলেন, “বেশি বেশি পরীক্ষা করতে পারলে সেটা আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে।”
অর্থনীতিতে মন্দাভাবের কারণে কর থেকে আয় নাটকীয় মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব না থাকায় বাজেট মূলত ঋণের উপরই ভর করতে হচ্ছে বলে মনে করছেন আতিউর রহমান।
ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থার উপর খুব বেশি নির্ভরশীল না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কারণ তাতে ব্যক্তি খাতের জন্য ঋণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে।”
এক্ষেত্রে আইএমএফ, এডিবি, বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থাগুলো মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে যে ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে, সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন আতিউর।
গত ৮ অর্থবছরের বাজেটের ১৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে না পারার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ”এবার আমাদেরকে বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে তার সঙ্গে ব্যক্তি খাত ও এনজিওকে সম্পৃক্ত করার কথা ভাবা যেতে পারে।”
ভার্চুয়াল ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, মানুষের আয় ও খরচের বিবেচনা নিয়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা করা উচিত। অনলাইন শিক্ষা প্রসারের জন্য জন্য ইন্টারনেটের খরচ কমানো নিতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে ‘ভ্যাকসিন ফান্ড’ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে সেটা গরিব মানুষের নাগালের বাইরে থাকতে পারে। এ কারণে গরিব মানুষকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।”
উন্নয়ন সমন্বয়ের এমরিটার ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলীর সঞ্চালনায় প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক তৈয়বুর রহমান, কলকাতার গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাকাসিয়া গ্লোবাল কনসাল্টিংয়ের প্রধান নির্বাহী ড. অরূপ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান।