যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে কয়লার যোগান কমে যাওয়ায় দেশটির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এতদিন রাশিয়ার গ্যাস, তেল ও কয়লার সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ইউরোপ। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রুশ তেল ও কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গ্যাসের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া না হলেও সামনের বছর থেকে রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ।
ইউরোপ মহাদেশভুক্ত হলেও ব্রিটেন এখন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত নয়। প্রতিবেশী জার্মানি, ফ্রান্সের মতো রাশিয়ার গ্যাসের ওপর সরাসরি নির্ভরশীলও নয়। উত্তর সাগর অঞ্চলে ব্রিটেনের নিজস্ব গ্যাসের মজুত রয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ তরলীকৃত গ্যাসও (এলএনজি) আমদানি করে দেশটি।
তবে এতদিন রাশিয়ার তেল ও কয়লার বড় ক্রেতা ছিল ব্রিটেন। রুশ জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও তার জেরে কয়লার যোগান কমে যাওয়া ব্রিটেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বড় আঘাত। সেই সঙ্গে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো যুক্ত হয়েছে দেশটিতে গত কয়েক মাস ধরে চলা ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি।
এছাড়া বিগত বিভিন্ন বছরে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা গেলে প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্স, নরওয়ে, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে সে ঘাটতি পূরণ করত যুক্তরাজ্য। কিন্তু বর্তমানে এসব দেশেও একই সংকট শুরু হওয়ায় আসছে শীতে আর বিদ্যুৎ রপ্তানির অবস্থায় নেই যুক্তরাজ্যের প্রতিবেশীরা। নরওয়ে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী শীতে যুক্তরাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
ব্রিটেনের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার এক ষষ্টাংশ ঘাটতি তৈরি হয়েছে এবং সামনের শীতে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ঘাটতি আরও বাড়বে। ফলে সরকারকে সামনের বছরের শুরু থেকে বাধ্য হয়েই বাড়াতে হচ্ছে বিদ্যুতের মূল্য, এবং লোডশেডিং।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ৪-৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারকে বিদুৎ বিল বাবদ প্রতি বছর পরিশোধ করতে হয় ২ হাজার পাউন্ড বা তারও কিছু কম ( বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৮০ টাকা)। কিন্তু সামনের বছর থেকে এই ব্যয়ের পরিমাণ ৪ হাজার ২০০ পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির ইতিহাসে বিদ্যুতের দাম এই পরিমাণ বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।
যুক্তরাজ্য সরকারের বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও শিল্পনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ব্লুমবার্গকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সংকট এমন ঘনীভূত হয়ে উঠবে, তা আমাদের চিন্তারও বাইরে ছিল। আসছে শীতে যেন বিদ্যুতের ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সেজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।