জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যে স্বল্প ননিযুক্ত দুধের দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, অর্থাৎ এই দুধের দাম জুন মাসে লিটারপ্রতি ১ পাউন্ড হলে জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৪ পাউন্ড। সেই সঙ্গে মাখনের দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ১ শতাংশ। মুখরোচক খাবার পাস্তার দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ আর ডিমের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
জ্বালানির দামও বেড়েছে অনেকটা। তরলীকৃত জ্বালানির দাম বেড়েছে ১১৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্যাসের দাম বেড়েছে ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিদ্যুতের ৫৪ শতাংশ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যের মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি এবার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জুলাই মাসে দেশটির সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ। জুন মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। দেশটির অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। তবে এখানেই শেষ নয়, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১৩ শতাংশে উঠতে পারে।
খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এ বাস্তবতায় জ্বালানির দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। উন্নত দেশ হওয়ায় যুক্তরাজ্য জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয় না। ফলে আগামী শীতে যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষ জ্বালানি দারিদ্র্যের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে জন্য দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনসহ আরও অনেকেই জ্বালানি বাজেটের আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গম ও সূর্যমুখী তেলের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে এটা বড় কারণ।
যুক্তরাজ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য ও অ্যালকোহলবহির্ভূত পানীয়র দামও অনেকটা বেড়েছে। মূলত এসব কারণে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে।
দাম বেড়েছে অনেক পণ্যেরই, পুরোনো গাড়ি, নতুন গাড়ি, বাইসাইকেল, বিমানভাড়া, ট্রেনভাড়া, বাসভাড়া, রেস্তোরাঁর খাবার, ক্রীড়াসামগ্রী—কী নেই এ তালিকায়।
যুক্তরাজ্যের লিচেস্টার শহরের রেস্তোরাঁমালিক শাফ ইসলাম বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাজ্যের আতিথেয়তা শিল্প বড় ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘কোমল পানীয় থেকে শুরু করে চাল, তেল—সবকিছুর দাম বাড়তি। ফলে খাবারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার মাসিক বিদ্যুৎ বিল এক হাজার পাউন্ড থেকে বেড়ে তিন হাজার পাউন্ডে উঠেছে।’ এ বাস্তবতায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি এ বাড়তি খরচের একটি অংশ গ্রাহকের কাঁধে ঠেলে দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা এই প্রথম খাবারের দাম বৃদ্ধি করেছি। দাম আমি বাড়াতে চাই না, কারণ আমি জানি, এতে মানুষের কত কষ্ট হয়।’
নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ছাত্র রেবেকা ব্রাউনও বিপাকে পড়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমার গ্যাস ও বিদ্যুতের খরচ ইতিমধ্যে ৮০ পাউন্ড থেকে বেড়ে ১৪০ পাউন্ড হয়েছে। বাড়িভাড়া, বাসভাড়া, ফোন, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই বিল দেওয়ার পর আমার খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ পাউন্ড থাকে, দাঁতের চিকিৎসক ও চুল কাটানোর ব্যয় বহন করা কঠিন। তবে রেবেকার ভাগ্য ভালো, তাঁর মা–বাবা প্রয়োজনে পাশে এসে দাঁড়ান।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড কিছুদিন ধরেই বলে আসছিল, সে দেশের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে উঠবে। কিন্তু তা যে এত তাড়াতাড়ি ঘটে যাবে, অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারেননি। দেশটির অর্থনীতিবিদেরা তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল ও শস্যের দাম অনেকটা কমেছে। তবে সেই দামের প্রভাব বাজারে পড়তে ছয় মাস লেগে যাবে।
কিন্তু মাথাব্যথার কারণ জ্বালানির দাম। পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে রাশিয়ার ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার দিকে যাচ্ছে, তাতে জ্বালানির দাম আরও বাড়লে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার এ বছর ১৩ শতাংশে উঠতে পারে। এতে মানুষের ভোগান্তির অন্ত থাকবে না। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান