আর্থিক সূচকে দুর্বল অবস্থায় থাকা দেশের দশটি ব্যাংককে রক্ষায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়ম, ঋণ খেলাপি, তারল্য সংকট, অব্যবস্থাপনা ও অর্থ সরিয়ে নেয়ার তথ্য উঠে আসে ওই ব্যাংকগুলোতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শকরা তাদের প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর পতনের বিষয়ে সতর্ক করেন।
ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের সঙ্গে সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো কোনোটির সঙ্গে তিন বছর মেয়াদি এমওইউ সই হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স) সঙ্গে সভা করবেন গভর্নর। এতে যোগ দেবেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, এমডি তারেক রিয়াজ খানসহ কয়েকজন পরিচালক এবং সিএফও।
বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংকের সঙ্গে সভা করছে, তার সব কটিই ডুবতে থাকা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। এরপর ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হবে।
সেদিন জানানো হয়, খেলাপি ঋণের মাত্রা, মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত ও প্রভিশন তথা সঞ্চিতির পরিমাণ এই চার সূচকের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ আগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি করেছে। এগুলোর কয়েকটিতে ও এর বাইরের কয়েকটিতে পর্যবেক্ষক বসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি ঘটছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও ১০ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে।
ফারমার্স ব্যাংক নাম থাকাকালে ঋণ বিতরণে নানা অনিয়মের কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে। সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ৫ ব্যাংক মিলে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয়। এরপর এটির নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকটি এখন ক্ষুদ্র আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে পারলেও প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। গত জুন শেষে ব্যাংকটির ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৬৭ শতাংশ।