মার্কিন নৌবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইউএসএস রোনাল্ড রিগান ও ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে এবং ইউএসএস নিমিতজ পূর্ব অংশে টহল দিচ্ছে।
এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় পিছু হটবে না বেইজিং। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রশান্ত মহাসাগরে টহলে থাকা তিনটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের প্রতিটি ৬০টিরও বেশি বিমান বহনে সক্ষম। ২০১৭ সালে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত উত্তেজনার পর ওই অঞ্চলে এতো বেশি বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করেনি যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ চীন সমুদ্র ও তাইওয়ান নিয়ে বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এসব যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার প্রশান্ত মহাসাগরে বিমানবাহী মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতির খবর প্রথমবারের মতো সামনে আনে বার্তা সংস্থা এপি। হাওয়াইয়ের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের ডিরেক্টর অব অপারেশন্স রিয়ার অ্যাডমিরাল স্টিফেন কোহেলার মার্কিন বার্তা সংস্থাটিকে বলেন, ‘বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ এবং আক্রমণে সক্ষম জাহাজগুলো মার্কিন নৌশক্তির প্রতীক। এই মুহূর্তে এগুলোর তিনটিকে পাওয়ায় আমি খুবই খুশি।’
রবিবার চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমসের এক খবরে বলা হয়, মার্কিন যুদ্ধ জাহাজগুলো বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সমুদ্রে অবস্থানরত সেনাদের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।
বেইজিংয়ের নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ লি জিয়ে সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘এসব বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজে ভর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র অঞ্চল এবং এমনকি পুরো দুনিয়াকে দেখাতে চাইছে যে তারা এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নৌবাহিনী, যারা দক্ষিণ চীন সমুদ্রে প্রবেশ করতে পারে এবং জাইসা ও নানসা দ্বীপে অবস্থানরত চীনা সেনাদের হুমকি হতে পারে, এমনকি আশেপাশের নৌপথেও ঢুকে পড়তে পারে, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারে।’
গ্লোবাল টাইমসের ওই প্রতিবেদনটি চীনের পিউপিলস লিবারেশন আর্মির সরকারি ইংরেজি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে চীনা সেনাবাহিনীর অস্ত্র সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শন করতে মহড়া আয়োজন করতে পারে বেইজিং। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম ডিএফ-২১ডি এবং ডিএফ-২৬ এর মতো জাহাজ ধ্বংসকারী ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শণ করতে পারে চীন।’
মার্কিন নৌবাহিনীর সাতটি বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজের তিনটিই এখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় টহলে রয়েছে। বাকি চারটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনে বন্দরে অবস্থান করছে।
সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা ও কৌশল বিদ্যা ইন্সটিটিউটের রিসার্চ ফেলো কোলিন কোহ বলেন, চীন কড়াভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে কারণ তারা মার্কিন নৌবাহিনীকে করোনাভাইরাস জর্জরিত বাহিনী বলে যেভাবে দেখাতে চায় তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ছে এই টহল। তিনি বলেন, ‘এটা চীনের সেই বর্ণনার বিরুদ্ধে যাচ্ছে যাতে তারা বলতে চায় যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চাপে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’
ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট গত ৪ জুন সমুদ্রে টহল শুরু করেছে। গত মার্চে জাহাজটির এক হাজারের বেশি কর্মীর করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এটি গুয়াম বন্দরে অবস্থান নেয়। জাহাজটির ক্যাপ্টেন কার্লোস সারডিয়েলো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা থিওডোর রুজভেল্টকে নিয়ে সমুদ্রে ফিরেছি আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এবং জাতীয় শক্তির উপকরণ হিসেবে কারণ আমরাই থিওডোর রুজভেল্ট।’ করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষায় কর্মীদের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখার পর জাপানের বন্দর থেকে ইউএসএস রোনাল্ড রিগান ফের সমুদ্র যাত্রা করে মে মাসের শেষ দিকে। এক লাখ টনেরও বেশি অস্ত্র নিয়ে পানির পাঁচ ইঞ্চি নিচ দিয়েও চলতে পারায় জাহাজটির বিপুল যুদ্ধ ক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিবৃতিতে।