২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে সাহায্য হিসেবে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয় বিবেচনা করে আরো দুটি মেট্রোরেল লাইন ১ ও ৫ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাশ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে এ দুই প্রকল্পের কাজ।
নতুন এ দুটি মেট্রোরেলে জাপান বাংলাদেশকে আরো ৬৪ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ঋণ দিতে চলেছে। সহজ শর্তে এ ঋণ দিচ্ছে জাপানের সরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। অবকাঠামো খাতের জন্য এর সুদ হার হবে ১ শতাংশ। তবে স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের জন্য সুদ হার যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ ও ০.১ শতাংশ। দশ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে এ ঋণ। গ্রেস পিরিয়ডের আওতায় প্রথম ১০ বছর সুদ ছাড়াই মূল ঋণের অংশ পরিশোধ করতে হবে।
এ ঋণ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তরা জানান, বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে একসঙ্গে দেওয়া এই সহায়তা হবে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার এখন পর্যন্ত দেওয়া সর্বোচ্চ সাহায্য। দ্রুত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে এ ঋণচুক্তি। এ বিষয়ে ইআরডি ও জাইকার মধ্যে সব ধরনের পদেক্ষপ নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইআরডি’র যুগ্মসচিব (জাপান-আমেরিকা উইং) মোহাম্মদ আশরাফ আলী ফারুক বলেন, নতুন দুই মেট্রোরেল প্রকল্পে জাপান বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে। এখনও চুক্তি হয়নি। আমরা ঋণচুক্তির জন্য কাজ করছি। সব কিছু ফাইনাল করেই আপনাদের জানানো যাবে। সব চূড়ান্ত করার আগে মন্তব্য করা যাবে না।
সূত্র জানায়, ঢাকাবাসীর জন্য আরো একটি মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি-১ এর রুট নির্মিত হতে চলেছে। ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।। এর আওতায় এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর ও নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মোট ২৭.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলাইনমেন্ট ঠিক করা হয়।
এমআরটি লাইন-০১-এ এয়ারপোর্ট-খিলক্ষেত-যমুনা ফিউচার পার্ক-নতুনবাজার-বারিধারা-উত্তর বাড্ডা-হাতিরঝিল-রামপুরা-মৌচাক হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬.২ কিলোমিটার এবং অন্যটি নতুনবাজার-যমুনা ফিউচার পার্ক-বসুন্ধরা-পুলিশ অফিসার হাউজিং সোসাইটি-মাস্তুল-পূর্বাচল পশ্চিম-পূর্বাচল সেন্ট্রাল-পূর্বাচল সেক্টর-৭-পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ১১.৩ কিলোমিটার রুট নির্মিত হবে। এই প্রকল্পে জাইকা ঋণ দেবে ৩৩ হাজার ৯১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ চলতি সময় থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ব্যয় বিবেচনায় এটি ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হলো। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের আওতায় ৫৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মেট্রোরেল লাইন-৫: মেট্রোরেল লাইন-৫ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। নতুন এই মেট্রোরেলের এলাইনমেন্ট হলো- হেমায়েতপুর-বালিয়ারপুর-মধুমতি-আমিনবাজার-গাবতলী-দারুসসালাম-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-মিরপুর-১৪-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-২-নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৮-এর ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হবে। হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ লাইনটির ১৪ কিলোমিটার হবে পাতাল রুট; বাকি ছয় কিলোমিটার এলিভেটেড রুট। ফলে একই রুটে পাতাল ও উড়াল ব্যবস্থার সমন্বয়ে মেট্রোরেল হবে। প্রস্তাবিত এমআরটি রুট-৫-এ (নর্দান রুট) ১৪টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে নয়টি স্টেশন হবে আন্ডারগ্রাউন্ডে, বাকি পাঁচটি স্টেশন থাকবে মাটির ওপরে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে জাইকা দেবে ৩০ হাজার ৭৫৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প-১ ও মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ারড পাওয়ার প্রজেক্ট-৫ প্রকল্পে ৮৪ কোটি ডলার ঋণ দেবে জাপান। এ ঋণচুক্তি বাংলাদেশেই অনুষ্ঠিত হবে।
বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুকে রক্ষা করতেই এবার এর পাশে আলাদাভাবে ডুয়েলগেজ রেলসেতু নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। সড়কের পাশাপাশি সেতুতে রেল সংযোগও রয়েছে। তবে এই রেল সংযোগ বর্তমানে না থাকার সমতুল্য। সেতুতে ট্রেন চলে কচ্ছপ গতিতে। ইচ্ছে করলে কোনো যাত্রী দৌঁড়ে ট্রেনের আগেই সেতু পার হতে পারবেন। এর আগে কয়েকবার সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা। কারণ দুষ্কৃতিকারীরা ট্রেন আউটার সিগনালিং খাঁচা ভেঙে ফেলেছে। সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে ৪.৮ কিলোমিটার রেল সংযোগ এখন এক আতঙ্কের নাম।
নতুন প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে জাপানের উন্নয়ন সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান জাইকা ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা দেবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। সম্পূর্ণ স্টিল দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। হেলথ সার্ভিস স্ট্রেংদেনিং প্রকল্পের আওতায় জাপানে ৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি অনুষ্ঠিত হবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ঋণচুক্তি প্রসঙ্গে ইআরডি’র ঊর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির আগে কোনো নিউজ হলে জাইকা বিষয়টা ভালোভাবে নেয় না। তারা (জাইকা) আগাম কোনো তথ্য লিক হোক এটা চায় না। তাই ঋণচুক্তির বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করা যাবে না। তবে এটা বলতে পারি, খুব দ্রুত প্রকল্পগুলোর ঋণচুক্তি অনুষ্ঠিত হবে। আমরা এ বিষয়ে সবাই কাজ করছি। জাইকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।সুত্র: বাংলানিউজ।