পাম অয়েলের রফতানি পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অব প্ল্যানটেশন ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমোডিটিজ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর শেষে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল রফতানি করে প্রাপ্ত আয় দাঁড়াতে পারে সর্বনিম্ন ৬ হাজার ৫০০ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার কোটি রিঙ্গিতে (মালয়েশীয় মুদ্রা)। ডলারের হিসাবে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫২৪ কোটি থেকে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ডলারের মধ্যে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটি পাম অয়েল রফতানি করে সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৩৭৩ কোটি রিঙ্গিত আয় করেছিল।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোহাম্মদ খায়রুদ্দিন আমান রাজালি বলেন, বছর শেষে পাম অয়েলের রফতানি লক্ষ্য পূরণের বিষয়ে আমরা বেশ আশাবাদী। যদিও বছরের শুরু থেকে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মহামারী পাম অয়েল রফতানিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছিল। তবে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা এ চ্যালেঞ্জ মোকেবেলা করতে শুরু করেছি। তাই বছর শেষে পাম অয়েল রফতানিতে প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের রফতানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে তার এ প্রত্যাশার যথার্থতা মেলে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল রফতানি করে মালয়েশীয় রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ৩ হাজার ২৪৭ কোটি রিঙ্গিত আয় করেছেন। আগের বছরের একই সময়ে পণ্যটির রফতানি বাবদ দেশটি মোট ৩ হাজার ১৯২ কোটি রিঙ্গিত আয় করেছিল। সেই হিসাবে মহামারীর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মালয়েশিয়া থেকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়তি ৫৫ কোটি রিঙ্গিতের পাম অয়েল রফতানি হয়েছে।
মালয়েশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশ। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া মিলে পাম অয়েলের বৈশ্বিক রফতানি বাজারের ৯০ শতাংশের বেশি নিজেদের দখলে রেখেছে। মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের (এমপিওবি) এক নোটে বলা হয়েছে, বছরের শুরু থেকে ভাইরাস সংক্রমণ, লকডাউন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ থাকা কারণে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল রফতানিতে ভাটা পড়েছিল। জানুয়ারি-মে সময়ে দেশটির পাম অয়েল রফতানি ২৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। বিশেষত চীন ও ভারতের বাজার হারানোর শঙ্কায় পরেন মালয়েশীয় পাম অয়েল রফতানিকারকরা। মহামারীর কারণে চাহিদা কমায় চীন মালয়েশীয় পাম অয়েল কেনা কমিয়ে দিয়েছিল। অন্যদিকে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিরোধের আড়ালে মালয়েশিয়া থেকে পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দিয়েছিল ভারত।
তবে জুনে এসে মালয়েশিয়ার বাজারে পাম অয়েলের রফতানি পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এমপিওবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে ১৭ লাখ ১০ হাজার টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের আগস্টের পর মালয়েশিয়া থেকে পণ্যটির রফতানি সর্বোচ্চ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে পাম অয়েল আমদানি বাড়াতে শুরু করেছে চীন, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। এর প্রভাব পড়েছে মালয়েশিয়ার বাজারে। জুনে দেশটি থেকে পাম অয়েল রফতানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেড়েছে। বাড়তি রফতানির জের ধরে গত মাসে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের মজুদ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ কমে সাকল্যে ১৯ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। সুত্র: রয়টার্স ও স্টার অনলাইন।