ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমা সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন। এটি নীরবে-নিভৃতে লিভারকে অকেজো করে জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। আগে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার বেশি দেখা গেলেও এখন গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ জানান, শরীরের পাওয়ার হাউজ হলো লিভার। আমরা যা খাই, লিভার সেটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে। অনেক সময় খাবারের সাথে কিছু রোগ-জীবাণুও পেটে চলে যায়। লিভার এ জীবাণুগলো ধ্বংস করে। আর এগুলো ধ্বংসের মাধ্যমেই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় ও শরীর সুস্থ থাকে।
ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমা কী?
ডা. ফারুক আহমেদ জানান, আমাদের লিভারে সাধারণত ৩-৪ পাউন্ড চর্বি থাকে। লিভার সেলের চারপাশেও কিছু চর্বি থাকে। এ চর্বির পরিমাণ কোনোভাবে বেশি হলে অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।
তিনি আরোও জানান, বিশ্বের প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভার সমস্যায় আক্রান্ত। এক সময় এটি ধনীদের রোগ মনে করা হত। কিন্তু এখন গ্রাম পর্যায়েও প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত। শহরে এ হার আরও বেশি হতে পারে। এটি অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এজন্য চিকিৎসার চেয়ে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা বেশি জরুরি। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
ফ্যাটি লিভার কেন হয়
ফ্যাটি লিভার হওয়ার কারণ সম্বন্ধে ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, পশ্চিমা সমাজে চর্বি তৈরির প্রধান কারণ অ্যালকোহল। এটি ছাড়াও অনেক কারণে চর্বি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও ফ্যাটি লিভার অনেক বেশি হয়। এর বাইরে বিভিন্ন ওষুধ সেবন অথবা অন্যান্য রোগের কারণে ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। স্বাভাবিক ওজন কিংবা কম ওজনের মানুষেরও হতে পারে, সেটিকে লিন ফ্যাটি লিভার বলা হয়। লিভারের চর্বি জমার ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোনো বয়স নেই। বাচ্চাদের মধ্যেও এখন এই রোগের হার প্রায় ১৫ শতাংশ। এজন্য বাচ্চাদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যেসব বাচ্চার ওজন বেশি।
লিভারে চর্বি জমার লক্ষণ
ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, ফ্যাটি লিভার অনেকটা নীরব ঘাতক। স্বাভাবিক বা ফ্যাটের সময় কোনো মানুষই সেভাবে বুঝতে পারেন না। আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে ধরা পড়ে। শুরুর দিকে লিভারের চারপাশে কিছু চর্বি জমা হয়, অন্য কোনো লক্ষণ থাকে না। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে প্রদাহ শুরু হয়। এ সময় লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুরুতে শরীরে শক্তি কমে যায় এবং দুর্বল অনুভব করে। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। এর বাইরে জন্ডিস হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশ, চোখ, মুখ, হাত হলুদ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ অবস্থা আরও বেশিদিন চললে হাত-পায়ে পানি জমা হতে পারে। অনেক সময় রক্ত বমিও হয়। এরপরও চিকিৎসা না করালে সেটি লিভার ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। ক্যানসার হলে লিভারে চাকা হয়। লিভার বড় হয়ে যায় এবং রোগীরা ক্ষীণ বা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় রোগীর আয়ু দ্রুত কমে যায়।
সূত্র: ডক্টর টিভি