গত মাসে বন্যার বাড়ন্ত পানি জিংয়াশি প্রদেশের পোয়াং লেকের তীর উপচে ‘মাছ ও ধানের ভূমি’খ্যাত এ অঞ্চলের হাজার হাজার একর কৃষিজমি প্লাবিত করে। মূলত পোয়াং লেকসহ বৃহত্তর ইয়াংজি নদীর অববাহিকায় উত্পন্ন হয় চীনের মোট ধানের ৭০ শতাংশ।কিন্তু এ বছর অঞ্চলটিতে বাও ও তার বাবার মতো কৃষকদের অভাবনীয় ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে বন্যা।
পানিতে যে শুধু তাদের উত্তোলনযোগ্য ফসলেরই ক্ষতি হয়েছে তা নয়। বন্যার ব্যাপকতায় এ বছর তাদের পক্ষে জমিতে আর কোনো ফসল উৎপাদন করাও সম্ভব হবে না। বাও বলেন, জমিগুলো এখনো পানির নিচে। এর মানে হলো, পুরো বছর এবার আমাদের ফসলহীন থাকতে হবে। অথচ এরই মধ্যে তার পরিবারকে ২৮ হাজার ডলার সমপরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
মূলত বহু বছরের মধ্যে বন্যার কারণে এমন ফসলের ক্ষতি চীনে আর দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে এবারের বন্যায় মোট নিমজ্জিত ফসলি জমির পরিমাণ ১ কোটি ৩০ লাখ একর, যা আকারে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সমান। চীনের জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ দুর্যোগে কৃষিজমি, সড়ক ও অন্য সম্পদের মোট ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ ক্ষতি হয়েছে। বাওয়ের মতো কৃষকসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে এরই মধ্যে বেশ নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে চীনের অর্থনীতি। তার ওপর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির জন্য বড় ধরনের দুঃসংবাদ হিসেবে হাজির হয়েছে।
এ অবস্থায় অন্য দেশে থেকে বিপুল পরিমাণ আমদানির পাশাপাশি আগে থেকে মজুদকৃত খাদ্যশস্য বাজারে ছেড়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে বেইজিং এখন পর্যন্ত খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পেরেছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এ ব্যবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। কারণ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও বৈশ্বিক মহামারী চীনের জন্য ভবিষ্যতে অন্য দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আমদানির বিষয়টি আরো জটিল করে তুলবে। তাছাড়া চলতি মাসজুড়ে আরো ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় দেশটির বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, চলমান বন্যা দেশটির আরো উত্তরে সম্প্রসারিত হলে ঝুঁকিতে পড়বে গম ও ভুট্টার ফলন।
চলমান পরিস্থিতিতে চীনের খাদ্য সরবরাহের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে ফসল উৎপাদনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। তবে বন্যা আগস্টের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হলে জুলাই। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কৃষি জিডিপি প্রবৃদ্ধির পতন হতে পারে প্রায় এক শতাংশীয় পয়েন্ট। এর মানে হলো, প্রান্তিকটিতে কৃষি উৎপাদনের ক্ষতি হবে ১৭০ কোটি ডলার সমপরিমাণ।
তবে সম্প্রতি চীনা ব্রোকারেজ ফার্ম শেনওয়ান হংইউয়ানের বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার চীনকে ১ কোটি ১২ লাখ টন খাদ্যশস্য হারাতে হতে পারে। মধ্য জুলাই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির হিসাবে এ তথ্য জানিয়েছেন তারা। এদিকে এরই মধ্যে বিশ্লেষকরা দেখিয়েছেন, চীনে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছে। এক বছর আগের তুলনায় গত মাসে ভুট্টার দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চীনা কর্তৃপক্ষ যে বর্তমানে খাদ্যনিরাপত্তা ও সরবরাহ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে তা নিশ্চিত। সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হঠাৎই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিলিন প্রদেশে পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে বলেন, আমি মূলত এখানে এসেছি ফসলের অবস্থা দেখতে। এ বছর আমাদের কয়েকটি বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ফসলের বৃদ্ধি নিয়ে আমি চিন্তায় আছি।
সুত্র: সিএনএন বিজনেস।