ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগে মিডিয়ার বিভিন্ন খবরের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। তিনি বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক যথাযথ নিয়ম-কানুন মেনেই বিনিয়োগ দিয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগের অর্থ ফেরত আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ কম হওয়ার কারণে ব্যাংকে জমানো টাকা তুলে নিয়েছেন অনেক গ্রাহক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের কাছে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড। এক বছরে নগদ টাকা হাতে রাখার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। নভেম্বরের শুরুতে ১০টি দুর্বল ব্যাংকের তালিকা প্রকাশের পর ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে এমন গুজব রটে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অনেক গ্রাহক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। অনেকে নিয়মিত কাজের প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করেছেন। সব মিলে ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য কমছে।
এর মধ্যে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত টাকা খুইয়েছেন চোরের হাতে। এমন একটি ঘটনা ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় ঘটেছে। ব্যাংকে জমানো এক লাখ টাকা তুলে নিয়ে ঘরে রাখেন এক গ্রাহক। পরের দিন ব্যাংকে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডেস্ক অফিসারকে জানালেন রাতের বেলা চোর এসে ঘরে রাখা এক লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আফসোস করা ছাড়া কোনো বিকল্প তখন আর ছিল না।
কভিড মহামারির অভিঘাত ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। যার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। সব খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য ব্যবহার্য পণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। আয় হ্রাস ও পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সঞ্চয় ভেঙে ব্যয় নির্বাহ করছেন অনেক মানুষ।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার খবর পাওয়া যায় না। তবে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে টিকে থাকতে সাহায্য করা হয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংক খাতের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ব্যাংকগুলোর জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম ও নানাবিধ কারণে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে, যা চলমান পরিস্থিতিতে সহজেই অনুমান করা যায়। তবে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে আর্থিক লেনদেনের ভালো কোনো ব্যবস্থা এখনও বাংলাদেশে তথা বিশ্বের কোথাও গড়ে উঠেনি।
ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে প্রয়োজন ব্যাংক খাতকে দুর্নীতির রাহু মুক্ত করা। এজন্য সরকার, রাজনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সতর্ক পদক্ষেপ প্রয়োজন। দুর্নীতিবাজরা ছদ্মবেশে রাজনীতিবিদ ও সরকারের উচ্চ মহলে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে খেলাপি হয়ে যায়। ব্যাংকের বিনিয়োগ পরিশোধ না করার বাহানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চাপ দিতে থাকে তাদের পক্ষে নিত্য নতুন নিয়ম তৈরি করতে যেন তারা কাগজে কলমে খেলাপি না হন। এদের মধ্যে অনেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন। তারা জনগণের অর্থ খেলাপির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে জনগণের সেবা করার বাহানা করছেন রাজনীতিবিদের ছদ্মবেশে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার)। ব্যবসা অথবা আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার করছেন দেশের অনেক বড় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। দেশের ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়ে টাকা পাচার করছেন বিভিন্ন দেশে। বিদেশে গড়ে তুলছেন সেকেন্ড হোমসহ ব্যবসায়িক সাম্র্রাজ্য। আইন থাকলেও অর্থ পাচার বন্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিন দিন বেড়ে চলেছে এর পরিধি।
ব্যাংক খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের ব্যক্তি স্বার্থের কাছে দেশের স্বার্থ যেন লুণ্ঠিত না হয় সেদিকে সরকারের নজরদারি ও সদিচছা বাড়াতে হবে। মানিলন্ডারিং, বিদেশে অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি ও দুর্নীতি বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বৃদ্ধি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি।
লেখক: রিয়াজ উদ্দিন, ব্যাংকার।
অর্থসংবাদ/এসএম