ইতিহাস থেকে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের নিজস্ব শিল্প ছিল লেপ নির্মাণ। তবে এর জনপ্রিয়তা ছিল অবিভক্ত বাংলার সর্বত্র। লেপ তৈরির জন্য লম্বা আঁশের কার্পাস তুলার বীজ ছাড়িয়ে, তা ডোবানো হতো লাল রঙে। পরে সেগুলো শুকিয়ে মোলায়েম সিল্ক এবং মখমলের মাঝে দেয়া হতো। সেই মখমলের রং ছিল লাল। এ ছাড়া সুগন্ধের জন্য এতে ব্যবহার করা হতো আতর।
বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খানের আমল থেকেই রীতি অনুযায়ী লাল মখমলের কাপড় ব্যবহার করে লেপ সেলাই করা হতো। এরপর মুর্শিদকুলি খানের জামাতা নবাব সুজাউদ্দিন মখমলের পরিবর্তে সিল্ক কাপড় ব্যবহার শুরু করেন। তবে রঙের কোনো পরিবর্তন আসেনি। মখমল ও সিল্ক কাপড়ের মূল্য জনসাধারণের হাতের নাগালে না থাকার কারণে, পরবর্তী সময়ে সাধারণ কাপড় ব্যবহার করে লেপ তৈরির চল শুরু হয়। তবে কাপড়ের রং লালই থেকে যায়।
এদিকে লেপ বানানোর কারিগরদের মতে, তারা ছোটবেলা থেকেই লেপের রং লাল দেখে এসেছেন। আর শুনেছেন, ঢাকার নবাবদের আমলেও লেপ তৈরির জন্য লাল রঙের কাপড় ব্যবহৃত হতো। আর এভাবেই লেপ বানানোর রীতিতে এসেছে লাল রং। লেপে লাল রঙের কাপড় ব্যবহারের কারণ হিসেবে আরও বলা হয়, লেপ কখনো ধোয়া যায় না। আর লাল কাপড়ে ময়লাও অপেক্ষাকৃত কম চোখে পড়ে।
এসব প্রচলিত তত্ত্ব নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস বা ঐতিহ্যের রীতি মেনে নয়, ব্যবসার খাতিরে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই লাল কাপড় দিয়ে লেপ তৈরি করা হয়। দূর থেকেই লাল রং ক্রেতার দৃষ্টি খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। যদিও এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।