অন্যদিকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ইনভেস্টমেন্ট ও রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৪.১০ লাখ কোটি টাকা। তবে, এটি গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, এই সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ ছিল ইসলামী ব্যাংকগুলোর। সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ২৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
শুধু ডিপোজিটই নয়, কমেছে ব্যাংকগুলোর এক্সেস লিকুইডিটিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা লিকুইডিটি কমেছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর লিকুইডিটি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৭১ কোটি টাকায়।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লিকুইডিটি কমেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এই ব্যাংকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের ২৮৭৭ কোটি টাকার এক্সেস লিকুইডিটি কমে ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৭৬ কোটি টাকায়। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে লিকুইডিটি কমেছে।
তবে সব ইসলামী ধারার ব্যাংকে লিকুইডিটি কমেনি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বরে আইসিবি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, আল-আরাফাহ, ইউনিয়ন, স্ট্যান্ডার্ড এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে লিকুইডিটি বেড়েছে।
বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসলামী ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কারণে লিকুইডিটি ক্রাইসিসে পড়ে ব্যাংকগুলো। সেইসঙ্গে বাজার থেকে ডলার কিনে ইমপোর্ট বিল পরিশোধ করায় নগদ টাকার প্রবাহ কমে যায় ব্যাংকগুলোতে।
এছাড়া অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সাধারণত গ্রাহকরা রীতিমতো লাইন ধরে ডিপোজিটের টাকা তুলতে থাকে। ফলে অন্য ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট বাড়লেও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে কমে যায়।
অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্নভাবে ব্যাংকগুলোকে লিকুইডিটি সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরমধ্যে সুকুক বন্ডের বিপরীতে ১৪ দিনের 'ইসলামী ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি' ও 'মুদরাবা লিকুইডিটি সাপোর্ট' উল্লেখযোগ্য।
এর বাইরে ব্যাংকগুলো বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে থেকে ডিপোজিট সংগ্রহ করে লিকুইডিটি বাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইসলামিক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে গত তিনমাসে ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট কমেছে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যেখানে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকার ইমপোর্ট করা হয়েছিল, সেখানে ডিসেম্বর প্রান্তিকে করেছে মাত্র ৩৪ হাজার কোটি টাকা। কমার হার ৪২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
অবশ্য, ডিপোজিট ও লিকুইডিটি কমলেও ইনভেস্টমেন্ট বা লোন ডিসবার্সমেন্ট বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মোট বিনিয়োগ ৪ দশমিক ০৫ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৯০০০ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া আগের প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সও ২৭ শতাংশ বেড়েছে ইসলামিক ব্যাংকগুলোতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে, সামাজিকভাবে উপকারি শিল্প যেমন কৃষি ও ছোট ব্যবসায় আরো বেশি বিনিয়োগ করা উচিত তাদের। "মুদরাবা এবং মুশরাকার মত আদর্শ ইসলামিক পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ এখনও ন্যূনতম পর্যায়ে রয়েছে," বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।