জানা গেছে, ব্যাংকগুলো প্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এতে ওই ব্যাংকের শেয়ারে নিরুৎসাহিত হন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কাও থাকে।
প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঋণ অনিয়মে আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের ৮৯৩ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৬ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ৯২০ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের ১ হাজার ২১৫ কোটি, কমার্স ব্যাংকের ৫৬৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ হাজার ৬৯৭ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ২০৩ কোটি, এমটিবির ২৪৪ কোটি, সোস্যাল ইসলামি ব্যাংকের ১৯৮ কোটি এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সর্বশেষ অনুযায়ী, চলতি বছরের (২০২০) জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।