সপ্তাহের শেষ লেনদেন দিবস শুক্রবার ইউরোপে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স, এশিয়ায় জাপান, হংকং, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক কমেছে।
এদিন সবচেয়ে বেশি পতন দেখেছে জার্মানির শেয়ারবাজার। সেখানে দয়েশে ব্যাংকের শেয়ারের দর একপর্যায়ে তো ১৪ শতাংশ কমে যায়। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ব্যাংকের শেয়ারের দামে বড় লোকসানের প্রবণতা দেখা গেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির কমার্জব্যাংক, ফ্রান্সের সোসাইট জেনারেলের শেয়ার দর ৬ শতাংশ করে পড়েছে। যুক্তরাজ্যে বার্কলেস ব্যাংকের শেয়ার দরে পতন ঘটেছে প্রায় ৫ শতাংশ।
দিনের লেনদেনের শুরুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। সেখানে মর্গ্যান স্ট্যানলি, জেপি মরগান চেজ, গোল্ডম্যান স্যাকচ, ওয়েলস ফার্গো, ব্যাংক অব আমেরিকাসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ১ থেকে ২ শতাংশ কমেছে। তবে দেশটির আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক, প্যাকওয়েস্ট ব্যাংক করপোরেশন, ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্স ব্যাংক করপোরেশন, ট্রুইস্ট ফিন্যান্সিয়াল করপোরশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে শুক্রবার যুক্তরাজ্যে এফটিএসই ১০০ সূচক ১ দশমিক ৫৫ ও এফটিএসই সূচক ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, জার্মানির ড্যাক্স ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, স্পেনের আইবিইএক্স ৩৫ সূচক ২ দশমিক ২৫ শতাংশ ও নেদারল্যান্ডসের এইএক্স ১ দশমিক ৭১ শতাংশ পড়েছে। প্যান ইউরোপিয়ান সূচক ইউরোস্টকস ৫০ কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডাউজোন্স সূচক শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ, ন্যাসডাক সূচক শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দশমিক ৫৬ শতাংশ পড়েছে।
এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক দশমিক ১৩ শতাংশ, হংকংয়ের হেংসেং সূচক দশমিক ৬৭ শতাংশ, ভারতের বিএসই সেনসেক্স সূচক দশমিক ৬৯ শতাংশ কমেছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময় এবং এরপর ২০২০ সালে কোভিড–১৯ মহামারি আঘাত হানার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার কমিয়েছিল। কিন্তু গত বছর বা তারও কিছু আগে থেকে ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্রুতগতিতেই নীতি–নির্ধারণী সুদের হার বাড়িয়েছে। এভাবে সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এতে বিনিয়োগকারীদের স্নায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায়। তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বদৌলতে শেয়ারের দাম কমে যায়।
এ ছাড়া নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়ানোর ফলে তা মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এ জে বেল নামক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ পরিচালক রাস মোল্ড।
এদিকে জার্মানির বুন্দেস ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জোয়াকিম নাগেল বলেন, এখনো ব্যাপক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে নীতি সুদের হার আরও বাড়াতে হবে। তবে তিনি ডয়চে ব্যাংক সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক খাত নিয়ে মন্তব্য করেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংকের ব্যর্থতা এবং সুইজারল্যান্ডে ইউবিএস ব্যাংক তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রেডিট সুইস কিনে নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে অস্থিরতা প্রত্যাশিতই ছিল বলা যায়। এ ধরনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটার পর সাধারণত পথ এলোমেলো হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা হারানোর প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। এই অবস্থায় ইউরোপ, আমেরিকার সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা করছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন গত মঙ্গলবার এক বক্তৃতায় বলেছেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল হচ্ছে এবং মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভালো আছে।
শুক্রবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক) গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেন, যুক্তরাজ্যের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ‘নিরাপদ ও ভালো আছে’।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি) ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। সেই জের কাটতে না কাটতেই গত সপ্তাহে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের বিপদে পড়ার খবর প্রকাশ পায়। ব্যাংকটি তারল্য বাড়াতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। এরপরই জানা যায়, ক্রেডিট সুইসকে ইউবিএস এজির সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ক্রেডিট সুইসের শেয়ার দরে ব্যাপক পতন ঘটে। এরপর দেশটির আরেক বৃহৎ ব্যাংক ইউবিএস ৩২৩ কোটি ডলারে ১৬৭ বছরের পুরোনো ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে কিনে নেয়। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।