ইউসুফের পূর্বসূরি নিকোলো স্টার্জেনের অধীনে এসএনপিতে বিভাজন গভীর হলে দলীয় প্রধান নির্বাচনে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন তিনি। প্রায় পাঁচ সপ্তাহের প্রতিযোগিতার পর অবশেষে সোমবার (২৭ মার্চ) নমিনাল ভোটে জয়ী হয়ে এসএনপির দলীয় নেতা নির্বাচিত হন তিনি। রয়টার্স অবলম্বনে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের একটি দেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে একজন মুসলিম প্রার্থীর বিজয় এটিই ইঙ্গিত করে, স্কটল্যান্ডের ক্ষমতাসীন দলটি এখনও তার প্রগতিশীল নীতিতেই চলছে এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় থাকবে।
তবে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা নিয়ে পূর্বসূরি স্টার্জন যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা থেকে নিজেকে অনেকটাই দূরে রেখেছেন হামজা ইউসুফ। তিনি বলছেন, দলটিকে আগে চলমান বিতর্কের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে; এরপর এগোতে হবে স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে।
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা ও বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর হয়েছে বিভাজন। ফলে এখন দলের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ বছর বয়সী নতুন এই নেতার সামনে। আগে দলের বিভাজন ঠেকাতে হবে, এরপরে এগোতে হবে অন্যান্য সমস্যা নিয়ে।
ভোটে জিতে এডিনবার্গে ইউসুফ বলেছেন, "আমরা সেই প্রজন্ম হব, যারা স্কটল্যান্ডের জন্য স্বাধীনতা নিয়ে আসবে।"
"আমাদের ভেতরের বিভাজনগুলো মেটাতে হবে, দ্রুতই মেটাতে হবে; কারণ এরপরে আমাদের আরও একটি কাজ রয়েছে। একটি দল হিসেবে আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ থাকবো, তখনই আমাদের অবস্থান সবচেয়ে শক্তিশালী হবে এবং এই একতাবদ্ধ শক্তি আমাদের জাতির জন্য স্বাধীনতা এনে দেবে। এটিই আমাদের যৌথ লক্ষ্য," যোগ করেন তিনি।
কে এই নতুন নেতা?
হামজা ইউসুফের জন্ম স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। পড়াশোনা করেছেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজনীতি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি। এরপর ২০১১ সালে স্কটল্যান্ড পার্লামেন্টের সদস্য (এমএসপি) নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি একজন এমএসপি'র সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন।
ইউসুফের বাবা পাকিস্তানের নাগরিক। ১৯৬০ এর দশকে তিনি স্কটল্যান্ডে পাড়ি জমান। অন্যদিকে, তার মা কেনিয়াতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
ইউসুফ বর্তমানে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করছেন। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এছাড়া, একজন সৎ কন্যাও রয়েছে নতুন এই দলনেতার।
প্রজাতন্ত্রীতে বিশ্বাসী ইউসুফ মনে করেন, স্বাধীন স্কটল্যান্ডে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "আসুন, প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যেই আমরা বিবেচনা করি, আমাদের রাজতন্ত্রের চেয়ে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া যৌক্তিক কি-না।"
২০১২ সালে স্কটিশ সরকারের একজন জুনিয়র মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ইউসুফ। সেই সময়ে স্কটল্যান্ডে নিযুক্ত হওয়া সর্বকনিষ্ঠ এবং প্রথম জাতিগত সংখ্যালঘু মুসলিম মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে বিচার বিষয়ক সচিব (সেক্রেটারি ফর জাস্টিস) হয়ে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন এবং ২০২১ সালের মে মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হন।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদে যোগ দেওয়ার পর বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন ইউসুফ। গত মাসে অডিট স্কটল্যান্ড জানায়, এ সময়ের মধ্যে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা খাত অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে বা হচ্ছে না, সে সম্পর্কে স্কটিশ সরকারকে আরও স্বচ্ছ হওয়া আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে, ভোটারদের আস্থা অর্জনের জন্য সরকার ব্যবস্থায় কাজ করতে চান বলে ঘোষণা দিয়েছেন নতুন নেতা হামজা ইউসুফ। সেইসঙ্গে, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার ব্যাপারে যারা সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন তাদেরকে বোঝানোরও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
"আমাদের আরও কাজ আছে; মানুষকে বোঝানোর কাজ। বিষয়টি এমন না হলে, আমরা এখানে দাঁড়াতাম না," বলেন ইউসুফ।
অর্থসংবাদ/এসএম