মাত্রাতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়াতে পারছেন না? আপনার সহায়তার জন্যই নতুন এক গবেষণায় অতিরিক্ত চিনি বা অ্যাডেড সুগার বাদ দেওয়ার ৪৫টি কারণ উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) 'ডায়াটারি সুগার কনজাম্পশন এন্ড হেলথ: আমব্রেলা রিভিউ' শীর্ষক একটি গবেষণা ছাপিয়েছে বিএমজে জার্নাল, যেখানে ৮,৬০১টি সমীক্ষার ৭৩টি মেটা-বিশ্লেষণের এক বৃহৎ পর্যালোচনা রয়েছে। সেখানেই উঠে এসেছে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ ডায়াবেটিস, গেঁটে বাত বা গাউট, স্থূলতা (ওবেসিটি), উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার, হাঁপানি, দাঁত ক্ষয়, বিষণ্ণতা, অকাল মৃত্যু সহ ৪৫ রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
গবেষণাটিতে একজন ব্যক্তিকে দৈনিক ক্যালরির ১০% এরও কম চিনি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য অধ্যাপক এবং সিএনএন মেডিক্যাল অ্যানালিস্ট ড. লিয়ানা ওয়েন বলেন, "এ ধরনের গবেষণা রোগীদের পরামর্শ দিতে এবং বোঝাতে সহায়তা করে যে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ফেলার মতো ছোট ছোট পরিবর্তন জীবনযাত্রায় কতো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।"
গবেষণার লেখকেরা বলছেন, ফ্রী সুগার এবং ক্যান্সারের মধ্যে এখনও যোগসূত্র স্থাপন করা হয়নি। তবে এ ফলাফল ওজন বৃদ্ধি, স্থূলতা প্রভৃতির উপর চিনির নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে। অন্যদিকে অতিরিক্ত ওজন আর স্থূলতা যে বিভিন্ন ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, সেটি অজানা নয়।
চিনি খাওয়া কি তবে একেবারেই বাদ!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চের নির্দেশিকাগুলোর সমন্বয়ে গবেষণাটি বলছে, প্রতিদিন ২৫ গ্রামের কম বা মাত্র ৬ চা-চামচের মতো চিনি গ্রহণ করা উচিত।
এই পরিমাণ চিনি আছে আড়াইটা চকলেট চিপ কুকিজে, ১৬ আউন্স ফ্রুট পাঞ্চে এবং দেড় টেবিল চামচ মধুতে। একটা আস্ত ডোনাটে ১৫ থেকে ৩০ গ্রামের মতো চিনি থাকতে পারে।
গবেষকেরা চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণের পরিমাণও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সপ্তাহে একবার ২০০-৩৫৫ মিলিলিটারের চিনির স্বাদযুক্ত পানীয় নেয়া যাবে। এটি ১২ আউন্স সোডার সমপরিমাণ।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ড. মায়া অ্যাডামস বলেন, খাবারের মাধ্যমে প্রতিদিন শরীরে কী কী উপাদান প্রবেশ করছে, সে সম্পর্কে জানুন। খাবার কেনার সময় পণ্যের মোড়কে উল্লেখিত পুষ্টিমান ভালোভাবে খেয়াল করুন। এমনকি ব্রেড, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, ইয়োগার্টের মতো যেসব খাবারকে আমরা সচরাচর মিষ্টিজাত খাবার হিসেবে মনে করি না, তাতেও থাকে এই 'অ্যাডেড সুগার'।
মিষ্টি স্বাদের পানীয়ের পরিবর্তে তাজা ফলের টুকরো কেটে পানির স্বাদ বাড়ান। খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে কেক, কুকি, আইসক্রিম না খেয়ে ফলের অভ্যাস করুন। দোকান থেকে না কিনে ঘরে তৈরি খাবার খান, এমনকি কেক, পেস্ট্রির মতো বেকিং আইটেমগুলো ঘরেই বানাতে পারলে চিনি গ্রহণের মাত্রা অনেকখানি কমানো সম্ভব বলে মত দিয়েছেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ব্রুক আগারওয়াল।
তিনি আরও বলেন,"পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমিয়েও চিনি গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কারণ ঘুমের অভাবে আমাদের শরীর যখন ক্লান্ত থাকে, তখনই আসলে আমরা বেশি বেশি চিনিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকি।"
চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেলে একটা সময় আমাদের টেস্টবাড কম চিনিযুক্ত খাবারেই স্বাচ্ছন্দ্য হয়ে উঠবে। ড. মায়া অ্যাডামসের ভাষ্যে, "কম চিনিতেই আসলে আমাদের জীবন বেশি মিষ্টি।"