রাশিয়ার বাজেট আয়ে জ্বালানি খাতের বড় অবদান রয়েছে। দেশটি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ উত্তোলন দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল করে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাদ পড়েনি জ্বালানি খাতও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ওই মাসেই একই পণ্যের ওপর প্রাইস ক্যাপ দেয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও প্রাইস ক্যাপ দেয়া হয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, রাশিয়া জ্বালানি তেলকে ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। যুদ্ধের সিংহভাগ ব্যয়ই মেটানো হচ্ছে এ খাতের রফতানি আয় থেকে। এ আয় বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে দেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্লেষকরা রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বা বিপণন কমে যাওয়ার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো।
মার্কিন বহুজাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান গত মাসে জানায়, রাশিয়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন যুদ্ধপূর্ব পর্যায়ে ধরে রাখতে সক্ষম হবে। চীন ও ভারতে স্থিতিশীল চাহিদার কারণেই এটি সম্ভব হবে। তবে দেশটি কিছু জ্বালানি তেলের রুট ইউরোপ থেকে অন্য অঞ্চলে পরিবর্তন করতে সমস্যার সম্মুখীন হবে।
রাশিয়া এরই মধ্যে ইউরোপের বাজার থেকে সরে এসেছে। জ্বালানি তেলের বিকল্প বাজার হিসেবে দেশটি এশিয়াকে বেছে নিয়েছে। এক্ষেত্রে দেশটির রফতানি তালিকায় শীর্ষে আছে চীন ও ভারত। এছাড়া তুরস্কেও বেশ ভালো জায়গা করে নিয়েছে রুশ জ্বালানি তেল। অন্যদিকে দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এসব দেশের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রাশিয়া।
জ্বালানি উপমন্ত্রী পাভেল সরোকিন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের বড় মজুদ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব মজুদ সরবরাহকে আরো সহজ করবে।’
পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত মাসে রাশিয়ার জ্বালানি রফতানি তিন বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক নি সংস্থা (ইআইএ) মাসভিত্তিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইআইএ জানায়, রাশিয়ার সমুদ্রপথে জ্বালানি তেল রফতানি গত মাসে দৈনিক ছয় লাখ ব্যারেল করে বেড়েছে। দৈনিক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ব্যারেলে, যা ২০২০ সালের এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।
প্যারিসভিত্তিক সংস্থার তথ্য বলছে, জ্বালানি তেলজাত পণ্য রফতানি কভিডপূর্ব অবস্থায় ফিরে গেছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য রফতানি দৈনিক সাড়ে চার লাখ ব্যারেল করে বেড়েছে। রফতানি দাঁড়িয়েছে দৈনিক ৩১ লাখ ব্যারেলে।
এদিকে ফেব্রুয়ারির তুলনায় জ্বালানি তেল রফতানি থেকে আয়ও বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। দৈনিক ১০০ কোটি ডলার করে বেড়ে আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭০ কোটি ডলারে। যদিও তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কম।