বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে, গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে গ্রাহক সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। এছাড়া এদিকে করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে গ্রাহকের কাছে মোবাইলের লেনদেন আরও জনপ্রিয় করতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষ সরাসরি সাক্ষাতে নগদ লেননেদের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশলেস লেনদেন বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। পাশাপাশি এখন শ্রমিকদের বেতন বোনাস, সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দিচ্ছে। এছাড়া গত ১ আগস্ট ছিল পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই জুলাই মাসে ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক, লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। ২০২০ সালের জুলাই মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজারে। যা তার আগের মাস মের চেয়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
জানা গেছে, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে এমএফএস সেবার লেনদেন ও গ্রহক সংখ্যা সঙ্গে সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যাও বেড়েছে। জুলাই মাস শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৭৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৩ হাজার ৫ জনে।
এমএফএস এ গেল জুলাইয়ে মোট ৩১ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৩৮০টি লেনদেনের মাধ্যমে ৬২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৩২ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৭ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। এ সময়ে উত্তোলন করেছে ১৯ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এসময় রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ ৯৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
জুলাইয়ে বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৮৭৯ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। সরকারি পরিশোধ এক হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
এদিকে করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে গ্রাহকের কাছে মোবাইলের লেনদেন আরোও জনপ্রিয় করতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের কোনো ধরণের চার্জ না কাটার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি-টু-পি) লেনদেনে (যে কোন চ্যানেলে) এ নির্দেশনা মানতে হবে। একই সঙ্গে লেনদেন সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক এক হাজার টাকা ক্যাশ আউট সম্পূর্ণ চার্জ বিহীন রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগে যেখানে দিনে ২ বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ক্যাশইন করা যেতো। এখন তা বাড়িয়ে দিনে ৫ বার সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ক্যাশইন করা যাবে এবং মাসে ২৫ বারে করতে পারবে ২ লাখ টাকা। আর দিনে ৫ বার সর্বোচ্চ ক্যাশআউট করা যাবে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ২০ বার দেড় লাখ টাকা ক্যাশআউট করা যাবে। পাশাপাশি একজন গ্রাহক তার ব্যক্তি মোবাইল হিসেবে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা স্থিতি রাখতে পারবেন।