দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড। ‘টেস্ট অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক পার্কে আয়োজন করেছে মুজিব’স বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভাল।
তিন দিনের এই আয়োজন শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। শেষ হবে আজ শনিবার। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত মেলা। মেলা মাঠে প্রবেশ করতে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে কামাল আতাতুর্ক পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, মেলা মাঠে নানা বয়সী প্রচুর মানুষ। মাঠের চারপাশ ঘিরে বসানো হয়েছে অস্থায়ী স্টল। প্রবেশ পথ দিয়ে মেলা মাঠে ঢুকতেই দেখা মিলল শেরপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী তুলশীমালা চাল ও সেই চালের তৈরি খাবারের একটি স্টল। শেরপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষে এই চালের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিগেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক সনদের জন্য আবেদন করা হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ে। স্টলটি নিয়েছেন অনলাইনে ব্যবসা করা ‘আবাদ’-এর স্বত্বাধিকারী ফারজানা ববি লিজা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন শেরপুর জেলা ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলম হোসেন।
ফারজানা ববি বলেন, মূলত এই চাল দিয়ে তৈরি করা ভাত, পায়েস ও জর্দা দর্শনার্থীদের সামনে প্রদর্শন করতে এখানে অংশগ্রহণ। আর আলম হোসেন জানান, এটি শেরপুর তথা দেশের ঐতিহ্যবাহী চাল, যা থেকে সুগন্ধ ছড়ায়। যে খাবারই তৈরি করা হোক, চালের সুগন্ধ থাকবেই। প্রতি কেজি চাল বিক্রি করা হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে।
মাঠের আরেক পাশে রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনেরও একটি স্টল। সেখানে বিক্রি করা হচ্ছে নানা ধরনের খাবার। খাবারের মেনু লিখে রাখা হয়েছে কাঁঠাল পাতায়। এসব খাবারের মধ্যে সর্বনিম্ন এক পিস সন্দেশের দাম ৪০ টাকা, আর সর্বোচ্চ সরষে ইলিশ ৩০০ টাকা। ওই স্টলে প্রতিষ্ঠানটির ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশনের প্রধান জাহিদা বেগম বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজনে দেশের খাবারের ঐতিহ্য সবার সামনে তুলে ধরা যায়। আমাদের স্টলে ৬৪ জেলার খাবার রাখার চেষ্টা করেছি। উদ্দেশ্য একটাই, দেশের মানুষ যেন দেশীয় খাবার কত সুস্বাদু তা বুঝতে পারে।’
খিলগাঁও থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলায় এসেছেন ডা. মো. মাকসুদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে খাবার সংগ্রহ করি। এখন এখানে একসঙ্গে বিভিন্ন জেলার খাবার পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে।’
শাহি খাদক ড্যাফোডিলের শাহরিয়ার জামান : মেলায় খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পুরো তিন প্লেট খাবার খেয়ে গতকাল প্রথম হয়েছেন মতিঝিলের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জামান। খাবার হিসেবে হাজি বিরিয়ানি দেওয়া হয়। সঙ্গে কোমল পানীয়। ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে শাহরিয়ার তিন প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে চতুর্থ প্লেট শুরু করলে সময় শেষ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এই আয়োজনে ৪০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। যাদের রেস্টুরেন্ট ও খাবারের মানুষের শুনাম অর্জন করেছে।
অংশ নেওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মণ্ডার স্টল, সিলেটের পানসী রেস্টুরেন্ট, মণিপুরি খাবার, কক্সবাজার সি ফুড, জামতলার সাদেক গোল্লা, কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই, সাতক্ষীরার সাগর সুইটস, খুলনার আব্বাস হোটেলের খাসির চুই ঝাল, পাবনার সতেজের নিমকি পাঁপড়, বরিশালের মাটির খাবার ঘর রেস্টুরেন্ট, নওগাঁর মা প্যারা সন্দেশসহ অন্যান্য।