এ ব্যাপারে জনশক্তি রফতানি সংস্থা বায়রা ও অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে আগে গড়ে প্রতিমাসে ৬০ হাজারের বেশি কর্মী বিদেশে যেতেন। সেই হিসাবে গত পাঁচ মাসে তিন লাখ কর্মী বিদেশে যেতে পারেননি। আর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে ছুটি কাটাতে এসেছেন এক লাখের বেশি প্রবাসী। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে এসেছেন আরও এক লাখের মতো প্রবাসী কর্মী। সব মিলিয়ে দুই লাখের বেশি প্রবাসী করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েছেন। বিদেশে গমনেচ্ছু নতুন কর্মী এবং আটকে পড়া প্রবাসী— সব মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ লাখ কর্মী সরাসরি করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদিও সীমিত পরিসরে কয়েকটি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হওয়ায় আটকে পড়া অল্পকিছু প্রবাসী ফিরে যেতে পারছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি হয়েছে ৭ লাখ ১৫৯ জন, যা গড়ে প্রতিমাসে ৬০ হাজারের কাছাকাছি। আর ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ৮১ হাজার ২১৮ জন। গড় হিসাবে এসময়ও প্রতিমাসে ৬০ হাজারের বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। মূলত,এরপর থেকে বিদেশে কর্মী যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ বলেন, ‘নতুন করে জনশক্তি রফতানি এখন অনিশ্চিত। কখন কোন দেশ কর্মী নেবে সেটা বলা যাচ্ছে না। এ বছরের মধ্যে নতুন করে আর জনশক্তি রফতানি হবে বলে মনে হয় না।’
বেনজির আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে রিক্রুট এজেন্সিগুলোর কাছে ৮৫ হাজারের বেশি ভিসা রয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে এখন আমরা খুব বিপদে আছি। এসব লোক বিদেশ যাওয়ার জন্য তৈরি ছিল। এখন তাদেরকে যে কবে পাঠানো যাবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।’
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে রেমিট্যান্স এসেছে এক লাখ ৫৫ হাজার ২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, আর ডলার হিসাবে ১৮ হাজার ৩৫৪ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৫৯ হাজার ২৯৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, আর ডলার হিসাবে ৬ হাজার ৯৬৪ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর গত জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ ১৮৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অতীতে কোনও একক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
বায়রার সভাপতি বেনজির আমহেদ বলেন, ‘রেমিট্যান্স তো জনশক্তি রফতানির ওপর নির্ভর করে। সেটা অলরেডি ব্লক হয়ে গেছে। রেমিট্যান্সে তো এর প্রভাব পড়বেই। দারুণভাবে প্রভাব পড়বে। সেটা হয়তো এখন বোঝা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন কর্মী বিদেশে যাওয়া বন্ধ থাকার পাশাপাশি পুরনো অনেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন, আবার অনেক দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা এখন বেকার হয়ে গেছেন। ফলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রেমিট্যান্সে পড়বে— যা পুরোপুরিভাবে আগামী বছরের শুরুতেই দৃশ্যমান হবে।’