তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে তুলনা তো দূর, দক্ষিণ এশিয়াতেও কাজের সুযোগ তৈরিতে পিছিয়ে ভারত। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মতো দেশে জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ (প্রায় ৩৩%) শিক্ষা, কাজ বা কোনও প্রশিক্ষণে যুক্ত নন। ভারতে সেই হার ৪০ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ জনে দু’জন আক্ষরিক অর্থেই বেকার। সম্প্রতি কাজের বাজারের এমন বিপন্ন ছবি ফুটে উঠেছে এ দেশে সরকারের পরিসংখ্যানেও। এনএসএসও রিপোর্ট জানিয়েছে বেকারত্ব ৪৫ বছরে সব চেয়ে বেশি। সিএমআইই-র রিপোর্টও বলেছে কর্মসংস্থানের ছবি বেশ ম্লান।
বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান ছবি এবং আগামী বছরে তার সম্ভাবনা নিয়ে গত শুক্রবার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের আর্থিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ। ভারতের অর্থনীতির বিবর্ণ ছবি সম্পর্কে উদ্বেগ স্পষ্ট সেখানে। টানা ছ’টি ত্রৈমাসিকে নিম্নগামী বৃদ্ধি থেকে বেকারত্ব— রিপোর্টে উঠে আসা নানা সমস্যা উল্লেখ করে জাতিসংঘের আর্থিক ও সামাজিক কমিশনের (দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া) প্রধান নাগেশ কুমার বলেন, ‘‘শ্লথ বিশ্ব অর্থনীতির ছায়া থেকে নিজেদের দেশকে বার করতে ২০১৯ সালে সুদ কমিয়েছে ৬৪টি শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু লাভ তেমন হয়নি। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। রিজার্ভ ব্যাংক টানা সুদ কমালেও চাঙ্গা হয়নি চাহিদা। হাল ফেরেনি অর্থনীতির। তার জন্য পরিকাঠামো, শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে বিপুল সরকারি লগ্নি জরুরি। তাতে ঘাটতির লক্ষ্য আপাতত শিথিল করতে হলেও, আপত্তি থাকার কথা নয়।’’ তাঁর যুক্তি, বৃদ্ধি চাঙ্গা হলে কর আদায় বাড়বে। সঙ্গে আড়ে-বহরে বাড়বে দেশের অর্থনীতির মাপ। সেই দু’য়ের প্রভাবে কমতে শুরু করবে জিডিপি-র সাপেক্ষে ঘাটতির অনুপাতও।
সাধারণত আইএমএফ বা বিশ্ব ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি যে কোনও মূল্যে ঘাটতিকে লক্ষ্যে বেঁধে রাখার কথা বলে। তার সামান্য নড়চড় হলে, রেটিং ছাঁটাইয়ের চোখরাঙানি দেখায় মূল্যায়ন সংস্থাগুলি। সেখানে ঘাটতির লক্ষ্যকে আপাতত ‘ভুলে’ আগে অর্থনীতির ছন্দ ফেরাতে জাতিসংঘের রিপোর্টের এই প্রশ্ন তাৎপর্যপূর্ণ, মত অনেকের। দি হিন্দু ও ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে