সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত ফার্স্ট কার্বন নিউট্রালিটি এক্সপোয় প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেপিএমজি। সেখানকার তথ্যানুযায়ী, গত বছর ইউরোপে ১২ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট ইভি বিক্রি হয়েছে। যেখানে চীনে উৎপাদিত গাড়ির অনুপাত মাত্র ১০ শতাংশ।
কেপিএমজি চায়নার প্রধান অর্থনীতিবিদ কেভিন ক্যাং বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে বিওয়াইডি, এক্সপেং ও লি অটোসহ চীনের অভ্যন্তরীণ ব্র্যান্ডগুলোর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিক্রি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।’
চীনের পরে ইউরোপ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দ্রুত বর্ধনশীল ইভি বাজার। ২০৩৫ সাল থেকে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর গাড়ি বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। মূলত কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে এ সময় থেকে অঞ্চলটিতে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির চাহিদা ও বিক্রি উল্লেখজনকভাবে বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা। কেপিএমজির তথ্যানুযায়ী, গত বছর ইউরোপে ক্রয়কৃত ১০ লাখ ইভির অর্ধেক সরবরাহ করেছে চীন। এর মধ্যে বিইভি, প্লাগ ইন হাইব্রিডস ও ফুয়েল সেল ভেহিক্যালও রয়েছে।
কেভিন ক্যাং বলেন, ‘চীনের ইভি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশে স্টোর ও কারখানা স্থাপন করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গ্রাহকদের জন্য পরিষেবা ও পণ্যের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের পরিচিতির পাশাপাশি বাজার হিস্যাও বাড়াতে পারবে।’
কেপিএমজি জানায়, বিভিন্ন ধরনের গ্রাহক চাহিদার প্রেক্ষিতে চীনের ইভি নির্মাতারা একাধিক পণ্য বাজারজাত করছে। ২০২২ সালে ইউরোপে চাইনিজ ইভির গড় মূল্য ছিল ৩০ হাজার ডলার। যেখানে টেসলার সবচেয়ে সাশ্রয়ী মডেল ৩ এর দাম ৪৫ হাজার ডলার। গত বছর চীনের কোম্পানিগুলো গ্রাহকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ১৩৬টির বেশি মডেল বাজারে এনেছে। এর মধ্যে ১১০ বিইভি মডেলও রয়েছে।
ক্যাংয়ের মতে, বিশ্ব বাজার সম্পর্কে ধারণা ও বৈশ্বিক কৌশল সম্পর্কে অবগত না থাকায় এখন ইউরোপের গ্রাহকের কাছে সেভাবে নিজেদের তুলে ধরতে পারেনি চীনা কোম্পানিগুলো। উদাহরণস্বরূপ গত বছর ইউরোপের বাজার ভলভো, এমজি ও পোলস্টার বিইভি মডেল বিক্রির দিক থেকে শীর্ষ তিনে ছিল। যেখানে চীনের উৎপাদিত বিইভি মডেল বিক্রির হার ছিল ২ শতাংশেরও কম।
কেপিএমজি চায়নার অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রির পার্টনার ইনচার্জ নর্বার্ট মেরিংয়ের মতে, চীনের ইভি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো যদি তাদের উপস্থিতি বাড়াতে চায়, তাহলে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে অথবা আরো কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে চীনা কোম্পানিগুলোকে আরো কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।’
গত বছর সবচেয়ে বেশি এনইভি বিক্রেতা কোম্পানি হিসেবে টেসলার জায়গা দখলে নেয় শেনজেনভিত্তিক বিওয়াইডি। গত মাসে এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি ফ্রান্সে কারখানা স্থাপনের কথা ভাবছে বলে জানায়। ইউরোপীয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সাল নাগাদ ইউরোপে প্রতি পাঁচটির মধ্যে তিনটি গাড়ি হবে বিদ্যুচ্চালিত।