এবং গত শতাব্দীর ধনী ভারতীয়দের তালিকায় শীর্ষে যিনি আছেন, খোদ ভারতেই তার নাম জানেন খুব কম সংখ্যক মানুষ।
বিশ শতকে ভারতের প্রথম ধনকুবের কে ছিলেন? ইতিহাস থেকে জানা যায়, বর্তমান ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের নিজাম মীর ওসমান আলী খান ছিলেন বিংশ শতাব্দির ভারতের প্রথম ধনকুবের। ১৯১১ সাল থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন তিনি।
বর্তমান ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজধানী তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদ। তবে ব্রিটিশ ভারতে ‘তেলেঙ্গানা’ নামে কোনো রাজ্য ছিল না। এখনকার সময়ে তেলেঙ্গানা বলতে যে রাজ্যটিকে বোঝায়— সেটিরই নাম ছিল হায়দ্রাবাদ।
হায়দ্রাবাদের শাসক বা রাজাদের বলা হতো ‘নিজাম’। মীর ওসমান আলী খান ছিলেন হাদ্রাবাদের শেষ নিজাম। ১৯৪০ সালের গোড়ার দিকে তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০০ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের নিরিখে সেই সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ হাজার ৫৮০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেরের নাম এলন মাস্ক। তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে হায়দরাবাদ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। ৩৫ বছরেরও বেশি সময় হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন মীর ওসমান। ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতালাভের পর জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করে ভারতের সরকার। সেই আইনের আওতায়ই ১৯৪৮ সালে রাজত্ব হারান মীর ওসমান। ওই বছরই ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় হায়দ্রাবাদ।
হায়দরাবাদের নিজাম ছিলেন ব্রিটিশ শাসকদের অনুগত। স্বাধীনতা যখন আসন্ন, সে সময় তিনি পাকিস্তানে যোগ দিতে কিংবা সাবেক ব্রিটিশ আমলের মতো ভারতের করদ রাজ্যের রাজা হিসেবে নিজের রাজত্ব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতিগত কারণে তিনি ভারতে যোগদান করতে বাধ্য হন।
মীর ওসমান আলী খানকে আধুনিক হায়দ্রাবাদের স্থপতি হিসেবে গণ্য করা হয়। নিজামের পদ চলে যাওয়ার পর ভারতকে প্রথম বিমানবন্দর এবং একটি বিমান সংস্থা দিয়েছিলেন মীর ওসমান। তাছাড়া, হায়দ্রাবাদের রাস্তা, রেল এবং বিদ্যুতের পরিকাঠামো উন্নয়নেও সাহায্য করেছিলেন। হায়দ্রাবাদ হাইকোর্ট এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ হায়দ্রাবাদসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে মীর ওসমান আলী খানের।
১৯৩৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ধনকুবের হিসেবে স্থান করে নিয়েছিলেন হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, মীর ওসমান আলী খানের কাছে ১৮৫ ক্যারেটের হীরা এবং জ্যাকব ডায়মন্ড ছিল। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিয়ের সময় তাকে হীরাটি উপহার দিয়েছিলেন নিজাম। এছাড়াও মীর ওসমান আলী খানের ছিল ৫০টি রোলস-রয়েস গাড়ি , আর ছিল একটি সিলভার ঘোস্ট থ্রোন গাড়ি।
অর্থসংবাদ/এসএম