২০১৮ সালে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এবার পিছিয়েছে। এবার ভারতের স্কোর শূন্য দশমিক ৪৯ এবং অবস্থান ১১৬। এই স্কোরের অর্থ হচ্ছে, বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করে বাংলাদেশের একজন শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হলে গড়ে ৪৬ শতাংশ উৎপাদনশীলতা দেখাতে পারবে। আর ভারেতর শিশু ৪৯ শতাংশ।
কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। কোভিড-১৯-এর আগে দেশে খর্বাকৃতির শিশুর হার ছিল ৩১ শতাংশ। কিন্তু এই ধাক্কায় তা আরও ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। পরিবারের আয় হ্রাসের কারণে উচ্চতা কমবে। বলা হয়েছে, এই শারীরিক কারণে এই শিশুদের শিক্ষণের সময় কমবে। তার সঙ্গে বিদ্যালয় তো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এতে আগামী বছর বাংলাদেশের স্কোর কমে শূন্য দশমিক ৪৫ হতে পারে।
এই অবস্থা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর। পরিস্থিতি এমন জায়গা গেছে যে দারিদ্র্য বিমোচনসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে পৃথিবী গত এক দশকে যে সফলতা অর্জন করেছে, কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় তা হুমকির মুখে। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোতে এর অভিঘাত হবে মারাত্মক-বিশ্বব্যাংকের মানবপুঁজি সূচক-২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ৬৮ লাখ শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়তে পারে। প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্টসংখ্যক শিশু ঝরে পড়ে, তার সঙ্গে অতিরিক্ত এই পরিমাণ শিশু ঝরে পড়বে-এমন আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা, কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ৬৮ লাখ শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়তে পারে। প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্টসংখ্যক শিশু ঝরে পড়ে, তার সঙ্গে অতিরিক্ত এই পরিমাণ শিশু ঝরে পড়বে-এমন আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। এই শিশুদের ৬০ শতাংশের বয়স ১২-১৮ বছরের মধ্যে। পারিবারিক আয় হ্রাসের কারণে তারা পাকাপাকিভাবে বিদ্যালয় ছাড়বে বলেই মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে মাথাপিছু জিডিপি ৪ শতাংশ কমবে। আর তাতে বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশু-কিশোরের সংখ্যা ২ শতাংশ বাড়বে।
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার, শিশুদের স্কুলে পাঠ গ্রহণের সময়, শিক্ষার মান, প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা, শিশুদের সঠিক আকারে বেড়ে ওঠাসহ বেশ কয়েকটি সূচক দিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ধারণাটা হচ্ছে, আদর্শ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধা পেলে একটি শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে শতভাগ উৎপাদনশীলতা দেখাতে পারে। কিন্তু নিজ নিজ দেশে ভিন্ন ভিন্ন মানের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বেড়ে ওঠে শিশুরা। তাই সবাই সমানভাবে শতভাগ উৎপাদনশীলতা দেখাতে পারে না।
সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে মেয়েরা। বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা, বিদ্যালয় বন্ধ ও পরিবারের আয় হ্রাসের কারণে মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার যেমন বাড়বে, তেমনি যৌন নির্যাতনের হারও বাড়বে।
খর্বাকৃতি ও মানসম্মত শিক্ষার অভাব-এই দুটিকে মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান বাধা মনে করে বিশ্বব্যাংক। তাদের আশঙ্কা, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে এই দুটি সূচকে দরিদ্র দেশগুলো আরও পিছিয়ে পড়বে। প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে চলতি বছর শিশুদের সাত মাস পর্যন্ত সময় নষ্ট হতে পারে। পারিবারিক আয় হ্রাসের কারণে খাদ্যের মান কমে যেতে পারে। এতে শিশুদের সঠিক বিকাশ ব্যাহত হবে।
সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে মেয়েরা। বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা, বিদ্যালয় বন্ধ ও পরিবারের আয় হ্রাসের কারণে মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার যেমন বাড়বে, তেমনি যৌন নির্যাতনের হারও বাড়বে।
প্রতিবেদনে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব মূল্যায়ন করতে পারেনি বিশ্বব্যাংক। কিন্তু তাতেই এমন আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এসেছে।