যেসব শর্ত জাতিসংঘের রুশ উপপ্রতিনিধি দিয়েছেন, সেগুলো হলো— রাশিয়ার সার, কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে— কার্যকরভাবে সেসব প্রত্যাহার করতে হবে, রাশিয়ার কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে— সেসবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে, আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা সুইফটে রাশিয়াকে পুনায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি থেকে উপার্জিত অর্থ ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে, সেসবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বলেন, ‘গতবছর তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যে চুক্তি হয়েছিল, সেখানে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ার কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় আমাদের মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি।’
‘যেসব শর্ত এই বৈঠকে উপস্থাপন করা হলো— সেগুলো মেনে নেওয়া হলে রাশিয়া শস্য চুক্তিতে ফিরবে,’ বলেন দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি।
২০২২ সালে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গম রপ্তানিকারী দেশ ইউক্রেনের শস্যগুদামগুলোতে আটকা পড়ে লাখ লাখ টন গম, ভুট্টা, ও সূর্যমুখীর বীজ।
এতে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারগুলোতে গম ও ভোজ্যতেলের যোগান সংকট শুরু হয় এবং বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়তে থাকে খাদ্যশস্য আর ভোজ্যতেলের দাম। এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের আগস্টে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত বছর আগস্টে চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে সেটির মেয়াদ। সর্বশেষ মেয়াদ বৃদ্ধির সময়সূচি অনুযায়ী, ১৭ জুলাই ছিল এই চুক্তির শেষ দিন।
চুক্তিতে ইউক্রেনের শর্ত ছিল, কৃষ্ণ সাগরের জাহাজ চলাচলের পথ থেকে সব মাইন অপসারণ করতে হবে এবং শস্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিতে হবে।
আর রাশিয়ার শর্ত দিয়েছিল—ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার শস্য ও কৃষিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোীয় মিত্ররা যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেসব তুলে নিতে হবে।
কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পর দেখা যায়,রাশিয়া শর্ত মেনে শস্যবাহী জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিলেও রাশিয়ার শস্য ও কৃষিপণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি পশ্চিমা বিশ্ব।
রাশিয়া যে এ ব্যাপারটিতে খুবই ক্ষুব্ধ— তা গত কয়েক মাস ধরেই জানান দিচ্ছিল মস্কো। গত ১৮ জুন রুশ দৈনিক ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখাপাত্র পেসকভ বলেছিলেন, ‘এই চুক্তির পেছনে আমাদের কিছু শর্ত ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য— সেসবের কোনোটিই মানা হয়নি। ভবিষ্যতে কী হবে— তা এখন বলা খুবই কঠিন; তবে আমরা বলতে পারি— মস্কো আর এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী নয়। আমরা অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি, অনেক ছাড় দিয়েছি…কিন্তু আর নয়।’
গত ১৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয় মস্কো। তারপর থেকেই অনিশ্চিত হয়ে গেছে এই চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা।