ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) প্রকাশিত ফিনসেন ফাইলসের ফিলিপিন অংশ অনুসন্ধান করেছে ফিলিপাইন সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (পিসিআইজে)। তারাই এই তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লোপাটের সঙ্গে ফিলিপাইনের রেমিট্যান্স ফার্ম ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের (ফিলরেম) যোগসাজশ আছে। পিসিআইজে জানিয়েছে, এই ফিলরেম ও ওয়েরকুইক ইনকরপোরেশন ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ১০০ কোটি ডলার লেনদেনের সন্দেহজনক তারবার্তা পাঠিয়েছে। আর সেটা করতে তারা মূলত বিডিও ইউনিব্যাংক, রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন ট্রাস্ট ব্যাংক কোম্পানির (মেট্রোব্যাংক) হিসাব ব্যবহার করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক বা আরিসিবির যোগসাজশের কথা সুবিদিত। এই ব্যাংকেরই এক শাখা ব্যবস্থাপক মারিয়া দেগুইতোর কাছ থেকে চুরি যাওয়া রিজার্ভের ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়। ফিলরেমের নাম অতটা পরিচিত না হলেও ফিলিপাইন সরকার অতি সম্প্রতি রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলরেমকে অভিযুক্ত করেছে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির আগে থেকেই এ ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন করছে ফিলিপাইনের এসব রেমিট্যান্স ফার্ম। ফিনসেন ফাইলে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এসব তৎপরতার তথ্য আছে। মার্কিন আর্থিক গোয়েন্দাদের ভাষ্যমতে, ফিলিপাইনের আর্থিক ব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর। সেখান থেকে টাকা পাচার করা খুবই সহজ, কারণ সে জন্য উৎস বা উপকারভোগীর নাম পর্যন্ত উল্লেখ করার দরকার হয় না। লেনদেনের উদ্দেশ্যও উল্লেখ করতে হয় না সেখানে।
ফিনসেন ফাইলসে এই দুটি কোম্পানির নাম বারবার এসেছে। মার্কিন সরকারের সাসপিশাস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্ট (এসএআর) বা সন্দেহজনক লেনদেনবিষয়ক প্রতিবেদনে ফিলরেমের নাম অন্তত ছয়বার এসেছে। ওয়েরকুইকের মালিক আবার ফিলরেমের এক কর্তা। এদের নাম এসেছে দুবার। রিজার্ভ চুরির বেশ কয়েকটি মামলায় ফিলরেমের কর্মকর্তাদের নাম আছে। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৬ সালে তাঁদের নিবন্ধন বাতিল করে।
ফিনসেনের ফাইলে যে ২ হাজার ১০০টি এসএআর আছে, তার মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়ের করা ২৭টিতে ফিলিপাইনের নাগরিকদের সন্দেহজনক তারবার্তার জনক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। ১ হাজার ৭০০টির বেশি লেনদেনে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার লেনদেনের খবর আছে।
এসএআরে বর্ণিত বৃহত্তম অংক লেনদেনের ঘটনাটি নথিভুক্ত হয়েছে ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল। ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলন ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তারবার্তা অনুসন্ধান করে দেখে, ৫ হাজার ১টি সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ১০০ কোটি ৩ লাখ ডলার হাতবদল হয়েছে এবং তাতে ফিরলেম ও ওয়েরকুইকের সম্পৃক্ততা আছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও আমলে নেয় তারা।
সন্দেহজনক লেনদেনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—
১. বার্তায় কে টাকা পাঠাচ্ছেন তা উল্লেখ করা হয়নি
২. টাকার উৎস ও লেনদেনের উদ্দেশ্য নিশ্চিত করা হয়নি
৩. বেশ কয়েকটি লেনদেনের অপর পক্ষ কাগুজে প্রতিষ্ঠান
৪. একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেশ কয়েকটি লেনদেন করা হয়েছে
৫. তারবার্তাগুলো টাকা পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ফিলিপাইন থেকে পাঠানো হয়েছে।
কঠোর আইন
এভাবে নামগোত্র উল্লেখ না করে কীভাবে লেনদেন করা সম্ভব—ফিলিপিনো ব্যাংকগুলোর কাছে পিসিআইজে এমন প্রশ্ন নিয়ে হাজির হলে বিডিও ইউনিব্যাংকের প্রধান কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা ফেডরিকো ট্যানকঙ্গকো বলেন, ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত আমানত ও সম্পদের গোপনীয়তার ব্যাপারে ফিলিপাইনের আইন অত্যন্ত কঠোর।
এ ছাড়া কাভার্ড ট্রানজ্যাকশন ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা আছে। তবে ফিলিপাইনের অ্যান্টি–মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) কাছে এসব তথ্য পাঠাতে হয়। তবে লেনদেন খতিয়ে দেখার বেলায় বিডিও অনিবার্যভাবে পেশকৃত নথিপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।