একমাত্র আক্ষেপ ছিল বিশ্বকাপ। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যে দিয়ে সেই আক্ষেপও ঘুচিয়েছেন মেসি। আর্জেন্টাইনদের ৩৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটেছে তার হাত ধরেই। একজন ফুটবলারের এক জীবনে আর কি চাওয়া থাকতে পারে? মেসিরও হয়তো নেই।
কিন্তু ফুটবল তো তাকে দুহাত ভরে দিতে প্রস্তুত। তাইতো তিনি যথারীতি ২০২২ সালের ফিফা ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়ে দারুণভাবে এগিয়ে আছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন ম্যানসিটির হয়ে ট্রেবল জেতা ও গোল বন্যা বইয়ে দেওয়া আরলিং হালান্ড। বিশ্বকাপের মতো মর্যাদাকর শিরোপা জেতায় আগামী অক্টোবরে হয়তো হালান্ডকে পেছনে ফেলে মেসিই জিতবেন রেকর্ড অষ্টম ব্যালন ডি’অর।
শুধু তাই নয়, কিংবদন্তি আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর পর ইতিহাসে দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে তিনি জিতবেন সুপার ব্যালন ডি’অরও। যেটা ৩০ বছর পর পর দেওয়া হয়।
সুপার ব্যালন ডি’অরের তালিকায় গেল তিন দশকের সেরা ফুটবলারদের ৩০ জন স্থান পেয়েছেন। আর সেই তালিকায় শীর্ষে আছেন লিওনেল মেসি। তার পরেই আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা রোনাল্ডো, ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা জিনেদিন জিদান ও শেভচেঙ্কো।
যেখানে গোটা ক্যারিয়ারে ব্যালন ডি’অরই জিতে খুব কম সংখ্যক ফুটবলার, সেখানে মেসি যদি সুপার ব্যালন ডি’অর জিতেন তাহলে সেটা হবে তার জন্য অনন্য এক সম্মান। যে সম্মান ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র পেয়েছে ডি স্টেফানো।
ফ্রান্স ফুটবল ১৯৮৯ সালে অনন্য মর্যাদার এই সুপার ব্যালন ডি’অরে ভূষিত করেছিল স্টেফানোকে। এটা এমন এক ফুটবলারকে দেওয়া হয় যিনি ফুটবল অঙ্গনে তিন দশক ধরে দারুণভাবে রাজত্ব করেন। ৩০ বছরের সময়ের সেরা একজন ফুটবলার জিতবেন সুপার ব্যালন ডি’অর। সেক্ষেত্রে বর্ণিল ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ মেসি নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবেন অন্য যেকারও চেয়ে।
স্টেফানো রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তার ক্যারিয়ার রাঙিয়েছিলেন। গোল করেছিলেন ৩০৮টি। শিরোপা জিতেছিলেন ১৭টি। আর ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন দুটি (১৯৫৭ ও ১৯৫৯)। সুপার ব্যালন ডি’অরের জন্য তাকে ভোটের মাধ্যমে মনোনীত করেছিল ফ্রান্স ফুটবল জুরি, আগের ব্যালন ডি’অর বিজয়ীগণ এবং ভক্তরা। ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফকে পেছনে ফেলে স্টেফানো জিতেছিলেন সুপার ব্যালন ডি’অর। অবশ্য ক্রুইফ তিনবার জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অর (১৯৭১, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪)। ভোটে তৃতীয় হয়েছিলেন মিশেল প্লাতিনি। যিনি টানা তিনবার জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অর (১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫)।
অবশ্য তখন কেবল সুপার ব্যালন ডি’অর দেওয়া হতো ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের। সে কারণে ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে ও আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা বিবেচনায় আসেননি। নতুবা তাদের দুজনের যেকোনো একজন জিততে পারতেন সুপার ব্যালন ডি’অর।
জানা গেছে, আবার ২০২৯ সালে দেওয়া হবে অনন্য মর্যাদার সুপার ব্যালন ডি’অর। এবং এটা জয়ের ক্ষেত্রে বলা যায় একচ্ছত্রভাবে এগিয়ে আছেন লিওনেল মেসি।
কেন তিনি এগিয়ে আছেন? একটু পরিসংখ্যানে চোখ বুলালেই বোঝা যাবে।
তিনি ফুটবল ক্যারিয়ারে ১০০৩ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৭৯৩টি। এছাড়া তিনি সাত-সাতবার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২১)। এছাড়া তিনি চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছেন। ১০টি জিতেছেন লা লিগার শিরোপা। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতেছেন ২টি। এছাড়া আর্জেন্টিনাকে তিনি কোপা আমেরিকার শিরেপা জিতিয়েছেন। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো- তিনি আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের শিরোপা উপহার দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে তার মোট শিরোপার সংখ্যা ৪৩! এমন বর্ণাঢ্য যার ক্যারিয়ার, সুপার ব্যালন ডি’অর তিনি না জিতলে আর কে হতে পারে সেটার দাবিদার?