অনাদায়ি ঋণ পরিশোধে কমবে সময়, বাড়বে খেলাপি

অনাদায়ি ঋণ পরিশোধে কমবে সময়, বাড়বে খেলাপি
ব্যাংকের অনাদায়ি ঋণ (ওভারডিউ লোন) খেলাপি করার সময় প্রায় সব খাতেই ৩ মাস করে কমানো হচ্ছে। বর্তমানে যেসব ঋণ কিস্তি পরিশোধের ৬ মাস থেকে ৯ মাসের মধ্যে খেলাপি হচ্ছে সেগুলো ৩ মাস থেকে ৬ মাসের মধ্যে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। তাতে গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যেমন কম সময় পাবেন, তেমনি খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মূলত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ গ্রহণের শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও খেলাপি ঋণ কমাতে এ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনাদায়ি ঋণ পরিশোধের সময় কমালে ব্যাংক খাতে চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

তাদের মতে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বড় ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। খেলাপিদের চাপে ফেলতে ঋণখেলাপি হওয়ার পর বিদেশ ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ, সব খাতেই নতুন ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা, সামাজিকভাবে বয়কট করার মতো নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন করার প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওইসব প্রস্তাব রাখা হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে সেগুলো আর রাখা হয়নি। উলটো খেলাপিদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নাম করে মূল খেলাপিদের আড়াল করা হয়েছে।

আগে খেলাপিরা ঋণ পেতেন না। নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইনের ফলে খেলাপিরা খেলাপি কোম্পানি ছাড়া অন্য কোম্পানির নামে ঋণ নিতে পারবেন। ফলে ব্যাংকিং খাতে লুটপাট করে যারা কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে না। উলটো তাদের নানা কৌশলে আইনের ফাঁক গলিয়ে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ব্যাংকিং খাতে জালিয়াতির মাধ্যমে যেসব ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আর পাচার করা অর্থ দেশে ফেরানোর কার্যত কোনো উদ্যোগই নেই। যে কারণে খেলাপিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

তাদের অভিমত- খেলাপিদের ছাড় দিতেই বারবার খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। অনাদায়ি ঋণ খেলাপি করার ক্ষেত্রে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। এতে খেলাপিরা বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। ২০১৯ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেই ঋণখেলাপি করা হতো। ওই সময়ের পর থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে সরে এসে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা শিথিল করা হয়।

এখন আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অন্যতম একটি শর্ত হিসাবে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিকমানে করার প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চলতি ঋণের কিস্তি পরিশোধের শেষ দিন থেকে ৩ মাস পর্যন্ত তা বকেয়া হিসাবে চিহ্নিত হবে। এরপর থেকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৬ মাস পর্যন্ত বকেয়া থাকবে। এরপর থেকে খেলাপি হবে। কিন্তু বাংলাদেশে চলতি ঋণের ক্ষেত্রে ৬ মাস পর ও মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৯ মাস পর খেলাপি হচ্ছে। এতে ঋণ পরিশোধে গ্রাহকরা বেশি সময় পাচ্ছেন। ফলে ঋণখেলাপি হওয়ার মতো পর্যায়ে গেলেও তা খেলাপি হচ্ছে না। যে কারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞার চেয়ে বাংলাদেশে সংজ্ঞায় সময় বেশি পাচ্ছে। ফলে খেলাপি ঋণ কম দেখানো সম্ভব হচ্ছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে মার্চ পর্যন্ত বিশেষ বিবেচনায় প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে বারবার নবায়ন করার পরও কিছু ঋণ খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। বাকি ঋণ এখন নিয়মিত হিসাবে রয়েছে। যেসব ঋণ নিয়মিত হিসাবে আছে সেগুলো নিয়মিত থাকলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আবার খেলাপি হলেই নতুন নীতিমালার আওতায় পড়বে। তখন সেগুলো নতুন নিয়মে খেলাপি করা হবে। নবায়নের ক্ষেত্রেও নতুন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।

অর্থসংবাদ/এমআই

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিদেশি ডেবিট কার্ডে অর্থ তোলা বন্ধ করল ইবিএল
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি নূরুল আজীম
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
বিকাশের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা মাহফুজ মারা গেছেন
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদের ৩ কমিটি গঠন
ব্যাংকে চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শিথিল
মাসিক সঞ্চয় হিসাব খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপে
ফের এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন
অফিসার পদে ৭৮৭ জনকে নিয়োগ দেবে সরকারি ৫ ব্যাংক
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালক হলেন যারা