রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে স্টেট কাউন্সিল ২৪টি নির্দেশনা দিয়েছে। তারা বলেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অধিকার রক্ষা করা হবে। সে জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ অধিকার আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে তারা।
এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগে পরিচালিত উদ্যোগগুলোকে আরও বেশি রাজস্ব সহায়তা ও কর প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই নির্দেশনায়, যেমন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করলে কিছু সময়ের জন্য আয়কর অব্যাহতি।
স্টেট কাউন্সিল বলেছে, আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের জন্য সহজ ও নিরাপদ তথ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে। আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা ও চীনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কারণে এই প্রস্তাব দিয়েছে তারা। মূলত তথ্য সুরক্ষা নিয়ে মতবিরোধ চলছে, যার মধ্যে বৈশ্বিক হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোও জড়িত।
কোভিড-১৯-এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনের অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করতে গিয়ে জেরবার হয়ে যাচ্ছে, সেখানে চীনে চলছে নেতিবাচক মূল্যস্ফীতি। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হলেও নেতিবাচক মূল্যস্ফীতি ও আবাসন খাতের সংকটের কারণে দেশটি সম্পর্কে পূর্বাভাস ভালো নয়। বিশেষ করে, আবাসন খাতের সংকট চীনের জন্য অশনিসংকেত, কারণ, জিডিপির ৩০ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।
এ ছাড়া চীন ঋণসংকটেও পড়েছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ঠিক কত, সেটা জানা কঠিন, কারণ, তাদের দাপ্তরিক তথ্য-উপাত্ত অনেক কম। জেপি মরগ্যান চেইজকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, জুন পর্যন্ত চীনের অভ্যন্তরীণ সামগ্রিক ঋণ দেশটির জিডিপির ২৮২ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। উন্নত দেশগুলো সাধারণত এত বেশি হারেই ঋণ নিয়ে থাকে।
ঋণের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করা গেলে সমস্যা নেই। কিন্তু যেসব ঋণগ্রহীতা মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিয়ে পর্যাপ্ত মুনাফা করতে পারে না, তাদের সমস্যায় পড়তে হয় এবং ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধে হিমশিম খেতে হয়। আর চীনে সেটাই ঘটেছে। এমনকি দেশটির স্থানীয় সরকার ইউনিটগুলোও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে চীন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ভূরাজনৈতিক কারণে তাদের এই প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে। কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো পশ্চিমা সরকারের চাপে চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিচ্ছে।
এই বাস্তবতায় দেশটি নতুন করে কতটা বিদেশি বিনিয়োগ পাবে, তা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। তবে চীন দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সে কারণে তাকে অতটা উপেক্ষা করাও কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।