এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃষ্টির পানির অভাবে পানামা খালে পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এতে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারছে না, আবার যেগুলো পার হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে পানির উচ্চতা বাড়িয়ে পার করতে হচ্ছে। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালে জাহাজ যাতায়াতে বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। এতে জাহাজজটে পড়া এই খাল পার হয়ে আটলান্টিক মহাসমুদ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে যেতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।
পানামা খালের উপপ্রশাসক ইলিয়া এসপিনো বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আগামী তিন মাস যদি ব্যাপক বৃষ্টিপাত না হয়, তবে এ পথে চলাচল সীমিত থাকবে এক বছর। এর ফলে গ্রাহকদেরও এক বছরের পরিকল্পনা নিতে হবে, কিভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁরা মানিয়ে নেবেন।’ তিনি জানান, এল নিনোর প্রভাবে খরায় ভুগছে পানামা খাল। ফলে সর্বোচ্চ ১৩.১১ মিটার গভীরতার জাহাজ চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালে পানামা খাল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৪০টি জাহাজ পার হয়েছে। এখন দৈনিক ৩২টির বেশি জাহাজ যাতায়াতের অনুমতি নেই। এই খাল পার হতে জাহাজগুলোকে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। এখন সে সময়সীমা বেড়ে ১৯ দিন পর্যন্ত হয়েছে। যেখানে সাধারণত ৯০টি জাহাজ অপেক্ষা করত, এখন ২০০-এর বেশি জাহাজ অপেক্ষমাণ থাকছে পার হওয়ার জন্য।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, এ পথে এমন অনেক পণ্য নিয়ে জাহাজ যাতায়াত করে, যা নিয়ে বেশিদিন অপেক্ষায় থাকা যায় না। প্রতিবছর আনুমানিক ২৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য নিয়ে এ পথে কার্গো যাতায়াত করে। এসব পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় ১৭০টি দেশে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ আমেরিকা, জাপান ও চীন। বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান লিয়ডস লিস্ট ইন্টেলিজেন্সের সিনিয়র বিশ্লেষক মিশেলে ওয়াইজ বকম্যান বলেন, ‘পানামা খালের এই সংকট একেবারে অপ্রত্যাশিত, বিশ্ববাণিজ্যের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। এতে জাহাজ খরচ বেড়ে যাবে, বিশেষত জ্বালানি খরচ বাড়বে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানামা খালে যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। যার প্রভাব সরাসরি বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির ওপরেও পড়তে পারে।
জানা যায়, প্রতিবছর গড়ে আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্যবাহী জাহাজ পানামা খাল দিয়ে যাতায়াত করে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি পানামা খালের পানির স্তর কমতে থাকে, তা হলে আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে সে দেশে।
সমুদ্র বিশেষজ্ঞ ও শিল্প সংস্থাগুলোর মতে, পানামা খাল দিয়ে চলমান বিধি-নিষেধের কারণে বিশ্ববাজারে ভোগ্য পণ্যের মূল্য পরিস্থিতির ওপর চাপ আরো বাড়বে। কারণ বিধি-নিষেধের জন্য জাহাজে করে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হচ্ছে এবং খরচ বাড়ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ওই পথ দিয়ে আরো যেসব দেশ পণ্য পরিবহন করে, তাদের সার্বিক আমদানি ব্যয় বাড়বে।
এশিয়া অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভোগ্য পণ্যের চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পানামা খাল। এ পথে জাহাজ যেতে না পারলে বিকল্প হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার ক্যাপহর্ন ঘুরে যেতে হবে। যে পথটি ঘুরতে বাড়তি আট হাজার নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিতে হবে। সময় বাড়বে দুই মাস এবং বিপুল অঙ্কের খরচও বাড়বে।
সাধারণত বৃষ্টির পানি ও পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে প্রবাহিত পানি দিয়ে পানামা খালে পানির সংস্থান হয়। তবে দুই বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। ফলে খালের পানির স্তরও উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে গেছে, যা শেষ পর্যন্ত পানামা খাল কর্তৃপক্ষকে (এসিপি) প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী জাহাজের সংখ্যা কমাতে বাধ্য করছে। -এএফপি, রয়টার্স, টাইমস অব ইন্ডিয়া