সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, জার্মানির ভোক্তামূল্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। রয়টার্সের পূর্বাভাসে দেশের মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে দাবি করা হয়েছিল। চলতি বছরের আগস্টে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেদিক থেকে এ সেপ্টেম্বরের সূচককে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আগে মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য বেড়ে যায়। জার্মানির শিল্প খাত বহুলাংশে রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। ফলে ইউরোপের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি।
প্রকৃত মূল্যস্ফীতি পরিমাপের ক্ষেত্রে খাদ্য ও জ্বালানির মতো দ্রুত পরিবর্তনশীল পণ্যকে বাদ রাখা হয়। জার্মানিতে সেপ্টেম্বরে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আগস্টে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্য ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাতটিতে মূল্য বেড়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। জ্বালানির মূল্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১ শতাংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার জ্বালানি থেকে ভর্তুকি বন্ধ করে। তুলে নেয়া হয় পরিবহন খাতের সরকারি বিশেষ সুবিধার ঘোষণা। ফলে তখন মূল্যস্ফীতি সূচক ছিল উঁচুতে। ভিত্তি বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের সূচক নির্ধারণে ভূমিকা পালন করেছে। তার পরও ভিত্তি বছরের প্রভাবকে বাইরে রাখলেও মূল্যস্ফীতি কমেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। জ্বালানি, খাদ্য ও শিল্পপণ্যে মূল্য ক্রমেই নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।
এর মধ্যে পাঁচটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানই পূর্বাভাস দিয়েছে, জার্মানির অর্থনীতি চলতি বছরে দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হবে। দেশটিতে সুদহার বৃদ্ধি প্রভাব ফেলবে বিনিয়োগে। এখন পর্যন্ত থাকা মূল্যস্ফীতির কারণে কম থাকবে ভোক্তাব্যয়। পূর্বাভাসে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি থাকবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি থাকবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতির দিকে গভীর দৃষ্টি রেখেছে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে প্রকাশিত সেপ্টেম্বরে স্পেনের মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
রয়টার্সের অর্থনীতিবিদের পূর্বাভাস অনুসারে, ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামতে যাচ্ছে। আগস্টের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও দুই বছর ধরে মুদ্রানীতি কঠোর করা হচ্ছে। বর্তমানে হয়তো সর্বোচ্চ সীমায় অবস্থান করছে সুদহার। যতদিন অর্থনীতি স্থিতিশীল না হয়, ততদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ঊর্ধ্বমুখী রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আইএনজির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কার্সটেন ব্রিজেস্কি বলেছেন, ‘ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি আগামী মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুদহার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলবে। খুব সম্ভবত সুদহার আর বাড়ানো হবে না।’
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবরে। তখন মুদ্রানীতি নিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
অর্থসংবাদ/এমআই