শনিবার ধর্মশালায় টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৭ ওভার ২ বলে ১৫৬ রান তুলে অলআউট হয়েছে আফগানিস্তান। তাতে শেষ ১০০ রানেই ১০ উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। দলের সর্বোচ্চ ৪৭ রান এসেছে রহমানুল্লাহ গুরবাজের ব্যাট থেকে। ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ইনিংস শুরু করা তাসকিন প্রথম ওভারটায় বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেছিলেন। তবে এরপর লাইন-ল্যান্থ ঠিক রাখতে পারিছিলেন না। অপর প্রান্তে শরিফুল ইসলামও নতুন বলের বাড়তি সুবিধা নিতে পারেননি। ফলে ভালো শুরুই পেয়েছিল আফগানিস্তান। ৫ ওভার শেষে বিনা উইকেটে তারা স্কোরবোর্ডে তুলে ২৭ রান।
পেসাররা সুবিধা করতে না পারায় ইনিংসের সপ্তম ওভারেই স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। নিজের হাতে বল তুলে নেন সাকিব। বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হজম করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। তবে পরের ওভারে এসে ঠিকই পাল্টা জবাব দিয়েছেন মিস্টার সেভেন্টি ফাইভ। এই বাঁহাতি স্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে এডজ হয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ইব্রাহিম। ২২ রান করা এই ওপেনারকে ফিরিয়ে আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শুরুটা দারুণ করলেও উইকেট হারানোর পর আফগানদের রান তুলার গতি কিছুটা কমে। তবে প্রথম পাওয়ার প্লের মধ্যেই প্রথম ফিফটির দেখা পায় তারা। প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলেছিল আফগানিস্তান।
প্রথম পাওয়ার প্লে শেষেও রানের চাকা সচলই ছিল আফগানদের। তারপরও ষোলতম ওভারের প্রথম বলেই সাকিবকে বড় শট খেলতে গেলেন রহমত শাহ। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপের চেষ্টায় টপ-এজ হয়ে বল আকাশে, সিলি মিড অফে লিটন দাস লুফে নিতে ভুল করেননি। সাজঘরে ফেরার আগে রহমতের ব্যাট থেকে এসেছে ২৫ বলে ১৮ রান।
শুরুর ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। পরের দশ ওভারে কিছুটা হলেও রানের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে স্পিনাররা-সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ। ১১-২০ ওভারের মধ্যে আফগানিস্তান তুলেতে পেরেছে ৪৬ রান। বিপরীতে তারা হারিয়েছে রহমত শাহর উইকেট।
উইকেটে এসে ধীর গতির শুরু করেছিলেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। তার এমন ব্যাটিংয়ের প্রভাব পড়েছিল দলের রান রেটের ওপরও। সেটা অধিনায়ক হয়তোবা বুঝতে পেরেছিলেন। তাইতো ২৫তম ওভারে মিরাজের ওপর আক্রমণ করতে গেলেন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হলো না। উল্টো দলের বিপদ বাড়ান নিজের উইকেট হারিয়ে। ১৮ রান করা এই ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
ইনিংস ওপেন করতে নেমে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। শুরুতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন। স্পিনার কিংবা পেসার সবার বিপক্ষেই সাবলীল ছিলেন তিনি। তবে ২৬তম ওভারে মুস্তাফিজে কাটা পড়েন তিনি। এই বাঁহাতি পেসারকে ডাউন দ্য উইকেটে এগিয়ে এসে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে হাঁকাতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাটারের মুভমেন্ট বুঝে গতি কমিয়ে দেন মুস্তাফিজ। ফলে ঠিকমতো টাইমিং হয়নি। ৪৭ রান করে গুরবাজ ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে।
নাজিবুল্লাহ জাদরানকে থিতু হতে দেননি সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনারের সোজা বলে লাইন মিস করেছেন নাজিবুল্লাহ। খানিকটা নিচু হওয়া বলে টার্নের আশায় ব্যাট চালিয়ে ছিলেন, আউটসাইড এডজে বল স্টাম্পে আঘাত হানে। ৫ রান করা নাজিবুল্লাহকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেন সাকিব।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের কল্যাণে ভালো শুরুই পেয়েছিল আফগানিস্তান। তবে মিডল অর্ডার ভেঙে যায় তাসের ঘরের মতোই। ১০ রানের ব্যবধানে ফিরেছিলেন-হাশমতউল্লাহ-গুরবাজ-নাজিবুল্লাহ। তাই মোহম্মদ নবির দায়িত্বটা বেড়ে গিয়েছিল। তার অভিজ্ঞতায় ভরস খুঁজছিল আফগানরা। তবে এবার ব্যর্থ হলেন তিনি। তাসকিনের ল্যান্থ বলে ইনসাইড এডজে লেগ স্টাম্প উপড়ে গেছে এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ রান।
মিডল অর্ডার ব্যাটাররা ব্যর্থ, তবে লোয়ার মিডল অর্ডারে পার্থক্য গড়ে দিলেন রশিদ, এমনটা অনেকবারই ঘটেছে আফগানিস্তান ক্রিকেটে। তবে আজ চিত্রটা ভিন্ন। ধর্মশালায় যখন ধুঁকছে দল, তখন বিপদ বাড়িয়ে ফেরেন রশিদও। মিরাজের নিচু হওয়া বল স্টাম্পে ডেকে এনে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
প্রথম স্পেলে সুবিধা করতে পারেননি শরিফুল ইসলাম। মাঝে স্পিনাররা ভালো করায় শরিফুলের শরণাপন্ন হননি সাকিব। তবে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে উইকেটের দেখা পান এই বাঁহাতি পেসারও। ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে বোল্ড করেছেন তিনি। দলীয় ১৫৬ রানে আউট হয়েছেন ওমরজাই। সেই একই রানে পরের দুই উইকেটও হারিয়েছে আফগানিস্তান। ফলে ১৫৬তেই আটকে যায় তারা।
অর্থসংবাদ/এমআই