মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি ট্রেজারি ইয়েল্ড বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা এদিকে ঝুঁকছেন। ফলে বিনিয়োগ কমছে অসময়ের নির্ভরতা মূল্যবান ধাতু সোনায়। এতে কয়েক মাস ধরেই সোনার দাম নিম্নমুখী।
ট্রেডিং ইকোনমিকসের হিসাবে, গত ৬ অক্টোবর বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল প্রতি আউন্স এক হাজার ৮২০ ডলার। মাত্র এক মাস আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল প্রতি আউন্স এক হাজার ৯২০ ডলার। সে হিসাবে এক মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে ১০০ ডলার বা ৪.৫৩ শতাংশ।
আশা করা হচ্ছে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) আরেক দফা সুদের হার বাড়াবে। ফলে ডলার আরো শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি কর্মসংস্থান নিয়ে ইতিবাচক খবর আশায় অর্থনীতি নিয়েও আশাবাদ বাড়ছে।
ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন বেশি লাভের আশায় ডলারভিত্তিক বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাও কমছে।
এ বছরের শুরুতে বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি মে মাসের শুরুতে সোনার দাম বেড়ে প্রতি আউন্স হয় রেকর্ড দুই হাজার ৫১ ডলার। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা, ব্যাংক খাতের সংকট ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র দফায় দফায় সুদের হার বাড়ালে দেশটির মূল্যস্ফীতি কমে আসে এবং অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে স্থিতিশীলতায় ফেরে। এতে ডলার শক্তিশালী হয় এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগও লোভনীয় হয়ে ওঠে। তাই গত কয়েক মাস ধরেই বিনিয়োগকারীরা সোনা ছেড়ে দেওয়ায় মূল্যবান এ ধাতুর দাম কমছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে, এ বছর সুদের হার একাধিকবার বাড়ানো হতে পারে। উচ্চ সুদহার ২০২৪ সালেও অব্যাহত থাকবে। এর ফলে মার্কিন ট্রেজারি ইয়েল্ড এক দশকে সর্বোচ্চ হয় এবং ডলারও আরো তেজী হতে থাকে।
বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান টেলেমাসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ম্যাট ডিমিট্রিজিন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আগামী ছয় মাস সোনার দাম প্রতি আউন্স এক হাজার ৭০০ ডলার থেকে এক হাজার ৯০০ ডলারের মধ্যে লেনদেন হবে।’
তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের হাতে কিছু ফিজিক্যাল সোনার বার আছে, এগুলো তাঁরা রেখে দেবেন অনিশ্চিত সময়ের জন্য। কারণ যেকোনো সময়েই অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে পারে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দেশেও কমছে সোনার দাম। সাত দিনে তিন দফায় সোনার দাম ভরিতে চার হাজার ২০০ টাকা কমেছে। এতে করে সোনার ভরি এক লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত সোনার দাম ছিল প্রতি ভেরি এক লাখ এক হাজার ২৪৪ টাকা। দাম কমার পর ভালো মানের অর্থাৎ হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯৭ হাজার ৪৪ টাকা। এর পাশাপাশি ২১ ক্যারেট সোনা ৯২ হাজার ৬১২ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৭৯ হাজার ৪৩২ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনা ৬৬ হাজার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন এই দর গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।
অর্থসংবাদ/এমআই