তিন বছর মেয়াদি এ স্কিম গঠনের ছয় মাস পার হলেও ঋণ বিতরণে অনীহা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে দিলেও এখন পর্যন্ত এক টাকাও ঋণ দেয়নি সরকারি-বেসাকরি ২২ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, ২০২০’। তিন হাজার কোটি টাকার এ স্কিমের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে। দেশে কার্যত সব তফসিলি ব্যাংক এ স্কিমের আওতায় অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
এজন্য আগ্রহী ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক চুক্তি করতে হবে। ব্যাংকগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ দিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ) হতে সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) বা এনজিওগুলোকে অর্থ দেবে। তিন বছর মেয়াদি এ স্কিমের গ্রহক পর্যায় সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে গঠিত এ স্কিমের আওতায় সরকারি-বেসরকারি ৪২টি ব্যাংক চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২২ ব্যাংক কোনো কোন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ অনুমোদন করেনি।
এসব ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি খাতের ৫টি, বিশেষায়িত দুইটি এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংক ১৪টি ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড।
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এছাড়া বেসরকারি খাতের ১৫টি ব্যাংক হলো- বাংলাদেশ কমার্স, ঢাকা, ইস্টার্ন, এক্সিম, আইএফআইসি, মিডল্যান্ড, মধুমতি, এনসিসি, প্রাইম, শাহজালাল ইসলামী, সীমান্ত ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড এবং ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।
এসব ব্যাংকগুলোর এ স্কিম থেকে স্ব ঘোষিত অর্থ ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৯৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা স্কিমের মোট অর্থের ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গঠিত এ স্কিম থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি ৫৫৪ কোটি টাকার অর্থ ছাড় করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অর্থায়ন করেছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক ও দ্য সিটি ব্যাংক।
এখনো পর্যন্ত ব্যাংক দুটি ১২০ কোটি টাকা করে বিতরণ করেছে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক বিতরণ করেছে ৮৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া ইউসিবি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৬০ কোটি টাকা করে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে অর্থায়ন করেছে।
ঋণ প্রাপ্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং পিরোজপুরের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে পিছিয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সুনামগঞ্জ, নড়াইল ও সাতক্ষীরা।
মহামারি করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল বিভিন্ন খাতের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর বিভিন্ন সময়ে এই প্যাকেজের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রায় এক লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। ঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এজন্য বেশ কয়েকটি পুন:অর্থায়ন তহবিল গঠন এবং বিদ্যমান তহবিলের আকার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ছোট ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য বিশেষ স্কিম গঠন অন্যতম।