মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে এশিয়ার কারখানা কার্যক্রম। ফলে চাপের মুখে পড়েছে বৈশ্বিক চাহিদা সরবরাহ চেইন।
চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ও টোকিওভিত্তিক অউ জিবুন ব্যাংকের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স সূচক বলছে, এশিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এতে উৎপাদন কমেছে এবং নতুন ক্রয়াদেশের পরিমাণও কমে গেছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে বেসরকারি কারখানা কার্যক্রম অপ্রত্যাশিতভাবে কমেছে। এসব তথ্য বিশ্ব অর্থনীতির উদ্দীপনা কমাচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অনিশ্চয়তা এবং সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে হুমকিতে ফেলেছে।
বিশ্বের বেশির ভাগ পণ্য উৎপাদিত হয় এশিয়ায়। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ প্রধান বাজারগুলো থেকে অপ্রতুল চাহিদার মধ্যেও অঞ্চলটি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) পর্যবেক্ষণ সেপ্টেম্বর থেকে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। অক্টোবরে দেশ দুটির পিএমআই ছিল যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ৭ এবং ৪৯ দশমিক ৮। পিএমআই সূচকের ভিত্তি ধরা হয় ৫০। এর নিচে থাকলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সংকোচন এবং ৫০-এর ওপরে থাকলে সম্প্রসারণকে নির্দেশ করে।
এক বিবৃতিতে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের অর্থনীতিবিদ উসামাহ ভাট্টি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখন পর্যন্ত চলতি বছরের মধ্যে ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের সঙ্গে সংযুক্ত এমন কাঁচামালের দাম বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফার্মগুলো মুদ্রা বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে। অন্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেছে। এতে ডলারে জ্বালানি তেলসহ কাঁচামাল ক্রয় খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।’
যখনই জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমে এসেছিল এবং এশিয়ার কারখানাগুলো এর সুফল হিসেবে মুনাফা অর্জন করতে শুরু করেছিল, তখনই অক্টোবরজুড়ে মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হয়ে পড়ল। সংঘাত বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে পড়লে চলতি প্রান্তিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরো বেড়ে যাবে। ফলে সুদহার আরো বেড়ে যেতে পারে এবং কারখানা কার্যক্রম সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ব্যাহত হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশ অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর ভর করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। এসব দেশও মন্থর দশার মধ্য দিয়ে অক্টোবর পার করেছে। ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের পিএমআই কমে গেছে। তবে মালয়েশিয়ার পিএমআই অপরিবর্তিত ছিল। একমাত্র ইন্দোনেশিয়ায় সেপ্টেম্বরের চেয়ে গত মাসে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যদিও প্রবৃদ্ধির গতি ছিল একেবারে মন্থর। অঞ্চলটির তারকা পারফরমার ভারতের পিএমআই নেমেছে আট মাসের সর্বনিম্নে। নতুন ক্রয়াদেশ, উৎপাদন ও রফতানিতে মন্থর প্রবৃদ্ধির কারণে পিএমআই সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৫ পয়েন্টে।
চীনের পুনরুদ্ধার কার্যক্রমও এগোচ্ছে থেমে থেমে। কাইসিন জরিপে, সেপ্টেম্বরের ৫০ দশমিক ৬ পয়েন্ট থেকে অক্টোবরে উৎপাদন কার্যক্রম নেমেছে ৪৯ দশমিক ৫ পয়েন্টে। এ চিত্র দেখা গেছে চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক সরকারি জরিপে। যেখানে বলা হয়েছে, বাজার চাহিদা কমায় অক্টোবরে কারখানা কার্যক্রম তলানিতে ঠেকেছে।
সরবরাহ, কর্মসংস্থান ও আন্তর্জাতিক চাহিদা কমে গেছে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে কাইসিন ইনসাইট গ্রুপের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ওয়াং ঝে বলেছেন, ‘অক্টোবরে উৎপাদকরা পুরোদমে কাজ করতে পারেননি। অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ার লক্ষণই বেশি, পুনরুদ্ধার রাতারাতি সম্ভব হবে না।’
অর্থসংবাদ/এসএম