চীন ইঙ্গিত দিয়েছে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো ত্বরান্বিত করতে প্রণোদনা বৃদ্ধি করবে। দেশটিতে তরুণদের বেকারত্বের হার বেড়েছে, সেই সঙ্গে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে তাদের রপ্তানিমুখী উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবাসন খাতের সংকট তো আছেই।
চীনের বেশ কয়েকটি বৃহৎ নির্মাণ কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ায় গ্রাহকেরা বিপাকে পড়েছেন। শুধু বৃহৎ বেসরকারি কোম্পানি নয়, দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোও চাপের মুখে আছে। তারা এত দিন শত শত কোটি ডলার ঋণ করে অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। রাজস্ব আয়ের জন্য জমি বিক্রির ওপর নির্ভরশীল ছিল তারা।
এই বাস্তবতায় চীন সরকার দেশটির স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে যে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মুডিস। তারা বলছে, এটা করা হলে চীন সরকারের আর্থিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তারা বলছে, এই পরিস্থিতিতে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার আরও দায় নিলে তাদের বস্তুগত মূল্য দিতে হতে পারে, যার কারণে চীনের আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল হবে এবং দেশটির ঋণমানে তার প্রভাব পড়তে পারে।
মুডিস যে চীনের ঋণমান আভাস নেতিবাচক করেছে, তার অর্থ হলো, তারা একসময় দেশটির প্রকৃত ঋণমান হ্রাস করতে পারে। সেটা হলে দেশটিতে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।
চীনের ঋণমান আভাস নেতিবাচক করলেও মুডিস দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান এ১ অক্ষুণ্ন রেখেছে। মান হিসেবে এটি যথেষ্ট শক্তিশালী; যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চেয়ে যা সামান্য কম। তারা আশা করছে, চীন সরকার সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটির দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা যা ছিল, তাই আছে; আবাসন খাতে যে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে, সেটা তারা মোকাবিলা করতে পারবে বলে তাদের বিশ্বাস। তারা আরও বলেছে, চীনের সামষ্টিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ধীরগতিতে হলেও নিয়মিতভাবে উচ্চমানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। সে জন্য মুডিস যে উদ্বেগ জানিয়েছে, তা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করে চীন সরকার।
টানা কয়েক দশক ৮ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীন কিন্তু সম্প্রতি চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। চলতি বছর যা ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শঙ্কা, ২০২৮ সালের মধ্যে চীনের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর সতর্ক বার্তা, সামনের বছরগুলোয় চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পড়বে। বিশেষ করে, সাব-সাহারা অঞ্চলে, যেখানে চীনের বিপুল বিনিয়োগ আছে।
এদিকে শুধু চীন নয়, সম্প্রতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং ঋণসীমা বৃদ্ধি নিয়ে অচলাবস্থার কারণে তাদের ঋণমানও হ্রাস করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থাগুলো।
অর্থসংবাদ/এমআই