সংসার খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা মধ্যবিত্তের কাছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কেননা ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, দোকান-বাজার, যাতায়াত, চিকিৎসা খরচ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যতটুকু আয় তা দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদাটুকু পূরণ করা অনেকেরই পক্ষে সম্ভব হয় না।
সংসার খরচের খাতায় কাটছাঁট করার কৌশল না জানলে মাসের শেষে টানাটানিতে পড়তে হতে পারে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখেই সাজাতে হবে খরচের খাত। তাতে আখেরে লাভ হয় নিজেরই।
সংসার খরচ একটু বুদ্ধি করে করতে পারলেই টাকার সাশ্রয় হয়। দিনের হিসেবে তা অল্প বলে মনে হলেও, মাসের হিসেবে ওই অল্পস্বল্প বাঁচানো টাকাই অনেক কাজে আসে। এর জন্য খেয়াল রাখুন কিছু বিশেষ দিকে....
* খরচে লাগাম পরাতে গেলে প্রথমেই ইলেকট্রিক ও ফোন বিলে নজর দিন। এই বিলগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা জটিল কিছু নয়, একটু সাবধান হলেই বিল কমতে বাধ্য।
* মুদির দোকান বা বাজারের বড় ব্যয়ও মাসের প্রথমেই করে রাখুন। কী কী কিনবেন তার তালিকা করে তার পাশেই সম্ভাব্য দাম লিখে ফেলুন। হিসেব করে দেখুন, মোট কত টাকা খরচ হবে। কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিস চোখে পড়লে তখনই বাদ দিন। আর বিশেষ বিশেষ কিছু দিনে নানা বড় শপিং মলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর ছাড় দেওয়া হয়। সেই দিন বেছেও সেরে নিতে পারেন কেনাকাটা।
* খুব শপিং করার অভ্যাস থাকলে তাতে রাশ টানুন। আসলে শপিং একটি নেশার মতো। এই সময় ফিল গুড হরমোন ক্ষরণ বেড়ে যায় বলেও বিজ্ঞানীদের দাবি। তাই অবসর যাপনের অন্যতম সঙ্গী শপিং। কিন্তু এর হাত ধরেই অহেতুক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হয়ে যায়, খরচও হয় বেশি।
* গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। তাই খরচ কমাতে আভেন, ইনডাকশন ব্যবহার করতে পারেন। রান্নার সময় কমিয়েও কিছুটা টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই প্রেশার কুকারের ব্যবহার বাড়ান। ঢাকা-চাপা দিয়ে রান্না করলে খরচে রাশ টানা যায়। অনেক রান্নাই ঢাকা দিয়ে বা গ্যাস কমিয়ে করলে সময় বাঁচে ও গ্যাসও কম পোড়ে। সেই সব কৌশল অবলম্বন করুন।
* বিদ্যুতের খরচ কমাতে শীতকালে রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ফ্রিজ বন্ধ রাখতেই পারেন। ঘরে সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে এলইডি বাল্ব লাগালে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। বিদ্যুতের জায়গায় অনেকে সৌরশক্তি ব্যবহার করেন। এটি লাগাতে প্রাথমিকভাবে বেশ খরচ হয়। তবে বাকি জীবনের জন্য অনেকটা সাশ্রয় পাওয়া যায়। রান্নায় সোলার কুকার, ঘরে সোলার লাইট ব্যবহার করা যায়।
* প্রয়োজন না হলে সংসারের জন্য বাড়তি কিছু কিনবেন না। এতেই সংসারের বাজেট ধরে রাখতে পারবেন। ধার-বাকি নয়, কিছু কেনার পরিকল্পনা করে নিন আগেই। কয়েক মাস ধরে টাকা জমিয়ে তা দিয়ে সেই জিনিসটি কিনুন।
* বাজেটের হিসেব রাখার নানা অ্যাপ রয়েছে। সেসব ডাউনলোড করে নিতে পারেন। মাসের শেষে দেখে নিন কোন খাতে বাজেট বেড়েছে। ফলে সেখানে রাশ টানতে পারবেন পরের মাসে।
মূল কথা, সাধ্যের মধ্যেই বেঁধে রাখুন সাধ। যতটা আয়, সেই বুঝেই ব্যয় সাজান। আয় বড় হওয়ার সঙ্গে স্বপ্নগুলোও বড় করুন, তার আগে নয়।