এদিকে অধিকাংশ সমীক্ষায় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে। এমনকি ২০০৮ সালের পর আর কোনো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এতটা শক্তিশালী অবস্থানে দেখা যায়নি বলে কিছু সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
যদিও এসব সমীক্ষাকে পাত্তা দিচ্ছেন না রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটের ফল বিপক্ষে গেলে আইনি রাস্তাতেও হাঁটতে পারেন, সেই মতো আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে রেখেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বাইডেনকে এগিয়ে রাখা সমীক্ষাকেও ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ যুদ্ধংদেহী মনোভাব ভোটগ্রহণের দিন সহিংসতার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু অঙ্গরাজ্যে এজন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
শেষ মুহূর্তে জোরকদমে চলছে প্রচার-প্রচারণাও। রোববার মিশিগান, আইওয়া, নর্থ ক্যারোলাইনার মতো ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’গুলোতে নির্বাচনী সভা করেছেন ট্রাম্প। জর্জিয়া ও ফ্লোরিডাতেও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফ্লোরিডার একটি জমায়েতে ফের নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য ড. অ্যান্থনি ফাউসিকে বরখাস্ত করার ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প।
রোববার প্রতিপক্ষ বাইডেন ছিলেন পেনসিলভানিয়ায়। যে পিটার্সবার্গ থেকে গত বছরের এপ্রিলে প্রচার শুরু করেছিলেন, সেখানেও জনসংযোগ করেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।
ভোটের আগের দিন গতকালও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জো বাইডেন ঠাসা শিডিউল রাখেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, উত্তর ক্যারোলাইনার ফায়েতভিলের আঞ্চলিক বিমানবন্দরে এক সমাবেশে ভাষণ দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর পেনসিলভানিয়া, মিশিগান রাজ্যের ট্রাভের্স সিটি, কেনোসা আঞ্চলিক বিমানবন্দর এবং মিশিগান রাজ্যের গ্রান্ড রেপিডসে সর্বশেষ চূড়ান্ত ভাষণ ছিল তার কর্মসূচিতে।
অন্যদিকে জো বাইডেনের সমর্থনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সোমবার ফ্লোরিডা ও জর্জিয়ায় প্রচারণার কর্মসূচি রাখেন। ওবামা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারণায় বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। জর্জিয়া রাজ্যটি রিপাবলিকানদের ঘাঁটি। এ রাজ্যে জয়ী হতে জো বাইডেনকে আটলান্টা এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ ও শহরতলির শ্বেতাঙ্গদের ভোট বেশি করে পেতে হবে। ওবামা এখানে প্রভাবশালী মুখ হতে পারেন।
এছাড়া জো বাইডেন, তার স্ত্রী জিল বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পশ্চিমাঞ্চলীয় পেনসিলভানিয়া। পেনসিলভানিয়ার বিভার কাউন্টিতে জো বাইডেনের প্রচারণায় যুক্ত থাকার কথা রয়েছে নন্দিত সংগীত তারকা লেডি গাগার।
বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের জরিপের মধ্যে রয়টার্সের করা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা ৫১ শতাংশ, ট্রাম্পের ৪২ শতাংশ। ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সমীক্ষায়ও উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনার মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে এগিয়ে থাকছেন বাইডেন। অন্যান্য সমীক্ষায়ও পাল্লা ভারী বাইডেনেরই। যদিও পপুলার ভোট তথা জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে করা এসব সমীক্ষা সব সময় শেষ কথা বলে না। এসব সমীক্ষায় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে হেরে গিয়েছেন, এমন নজির অনেক রয়েছে আমেরিকায়। কিন্তু এবার বাইডেন এতটাই এগিয়ে রয়েছেন যে অশনিসংকেত দেখছে রিপাবলিকান শিবির।
২০১৬ সালের হিসাব থেকে দেখা যায়, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেলেও ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৬, হিলারির ঝুলিতে পড়েছিল ২৩২ ভোট। অথচ মোট ভোটের ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ পেয়েছিলেন হিলারি, ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদানের দুটি পদ্ধতি রয়েছে—ই-মেইল ভোটিং ও সশরীরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া। করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছর ই-মেইল ভোটিং (আগাম ভোট) বেশি হয়েছে। এ ভোট গণনা হবে পরে। আগে থেকেই এ ভোটিংয়ে কারচুপির আশঙ্কা করে এবং গণনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে হারলে আদালতেও যেতে পারেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গণনা হয় ভোটগ্রহণের দিনই। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে মধ্যরাত বা পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন ও বিবিসি