ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের একটি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা আস্থা সূচক ৭৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। অক্টোবরে এ সূচকের অবস্থান ছিল ৮১ দশমিক ৮ পয়েন্টে।
জরিপের ফলাফলে ৩ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রভাব ফুটে উঠেছে। জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে আস্থা সূচক ৭৬ দশমিক ৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে, আগের মাসে যা ছিল ৯৬ দশমিক ৪ পয়েন্ট। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থকদের মধ্যে এ আস্থা সূচক ৬৮ দশমিক ৬ পয়েন্ট থেকে সামান্য বেড়ে ৬৯ দশমিক ৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ওয়েলস ফার্গো সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ টিম উইনলান বলেছেন, ‘ভোক্তা আস্থা সূচকের এই নিম্নমুখী প্রবণতা এটাই নির্দেশ করে যে পাবিবারিক ব্যয় নির্বাহ সক্ষমতা নিয়ে মার্কিনদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ কাজ করছে। আর্থিক প্রণোদনার প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে এ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালের পর এই প্রথমবারের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা মধ্যম ও উচ্চ আয়ের চেয়ে বেশি দাঁড়িয়েছে।’
কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় ৩ লাখ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল মার্কিন সরকার। এর একটি অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল বেকারত্ব ভাতা হিসেবে দেয়ার জন্য। কিন্তু লাখ লাখ বেকার এ আর্থিক সহায়তার বাইরে থেকে গেছেন। এ কারণে ভোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন দফায় রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব বুঝে নেয়ার আগে অর্থাৎ আগামী ২০ জানুয়ারির আগে এ বিষয়ে নতুন কোনো ঘোষণা আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ইতিবাচক অগ্রগতির খবর মিলতে শুরু করেছে। তা সত্ত্বেও আগামী কয়েক মাস ভোক্তা আস্থা সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু হান্টার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নতুন অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। ফলে সেসব অঞ্চলে নতুন করে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধের খড়্গ নেমে আসছে। ফলে আগামী কয়েক মাসে ভোক্তাদের আস্থা আরো কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’
একদিকে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে শ্রমবাজারের স্থবিরতা প্রকট হওয়া—এ দুইয়ের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অক্টোবরে দেশটিতে পাইকারি খাদ্যমূল্য বেড়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া গ্যাসোলিন, টাটকা শাকসবজিসহ অন্য ভোগ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। বেড়েছে বিভিন্ন সেবার ব্যয়ও। স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে গিয়ে মার্কিন পরিবারগুলোর রীতিমতো হিমশিম খাওয়ার জোগাড়।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও সহায়ক নীতি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, অন্তত আগামী বছর পর্যন্ত সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি অবস্থানেই রেখে দেবে ফেডারেল রিজার্ভ। সূত্র রয়টার্স।
অর্থসংবাদ/ এমএস